হজের রুকন, ওয়াজিব ও সুন্নতসমূহ

5300

 

হজ্বের রুকনসমূহ

১- ইহরাম অর্থাৎ হজ্বকর্মে প্রবেশের নিয়ত। হাদীসে এসেছে,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, «নিশ্চয় আমলের নির্ভরতা নিয়তের ওপর। আর প্রতি ব্যক্তির ভাগে তাই থাকে যা সে নিয়ত করে।»
(বর্ণনায় বুখারী)

২- সাফা-মারওয়ার সায়ী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

«তোমরা সায়ী করো; কেননা আল্লাহ তাআলা তোমাদের ওপর সায়ী লিখে দিয়েছেন।»(বর্ণনায় আহমদ) সায়ী করা আলেমদের কারো কারো নিকট ওয়াজিব, যা ছুটে গেলে দম দিয়ে শুধরে নিতে হয়।

৩- উকুফে আরাফা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

«হজ্ব হলো আরাফা।»(বর্ণনায় তিরমিযী)

৪- তাওয়াফে ইফাযা। আল্লাহ তাআলা বলেন:

(وَلۡيَطَّوَّفُواْ بِٱلۡبَيۡتِ ٱلۡعَتِيقِ )

{আর তারা যেন প্রাচীন ঘরের তাওয়াফ করে।}
[সূরা আল হাজ্জ:২৯]

সতর্কতা

যে ব্যক্তি হজ্বের কোনো রুকন ছেড়ে দিল তার হজ্ব পূর্ণ হবে না যতক্ষণ না সে তা পুনরায় আদায় করে নেবে|

হজ্বের ওয়াজিবসমূহ

১ - মিকাত থেকে ইহরাম করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিকাতের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, «এ মিকাতগুলো ওই এলাকাবাসী এবং বহিরাগতদের যারা ওই অঞ্চল দিয়ে হজ্ব ও উমরা আদায়ের উদ্দেশে আসবে তাদের জন্য।» (বর্ণনায় বুখারী)

২ - যে ব্যক্তি দিনের বেলায় উকুফে আরাফা করবে তার জন্য সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করা; কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করেছেন।

৩- মুযদালিফায় রাতযাপন; কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম মুযদালিফায় রাতযাপন করেছেন এবং বলেছেন,«আমার উম্মত আমার কাছ থেকে হজ্বকর্মসমূহ বুঝে নিক; কেননা আমি জানি না, এ বছরের পর তোমাদের সাথে আমার হয়তো সাক্ষাৎ নাও হতে পারে। আর যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুর্বলদের জন্য মধ্যরাতের পর মুযদালিফা থেকে প্রস্থান করার অনুমতি দিয়েছেন। এর দ্বারা বুঝা গেল মুযদালিফায় রাতযাপন করা আবশ্যক। আর আল্লাহ তাআলা মাশআরুল হারামের কথা উল্লেখের সময় এ ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। হানাফী মাযহাব অনুযায়ী সুবহে সাদেকের পর কিছু সময় মুযদালিফায় অবস্থান করা ওয়াজিব।

৪- আইয়ামে তাশরীকে মিনার রাতগুলো মিনায় যাপন করা। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাখালদের জন্য মিনায় রাতযাপন না করার অনুমতি দিয়েছেন। এর দ্বারা বুঝা গেল মিনায় রাতযাপন মূলত ওয়াজিব। ওযর ব্যতীত মিনায় রাতযাপন পরিত্যাগ করা বৈধ নয়। অবশ্য আলেমদের কারো কারো নিকট মিনায় রাতযাপন করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা, যা ছেড়ে দেয়া মাকরুহ এবং অযাচিত কর্ম।৫- কঙ্কর মারা। আল্লাহ তাআলা বলেন:

(وَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ فِيٓ أَيَّامٖ مَّعۡدُودَٰتٖۚ )

{আর আল্লহকে স্মরণ কর নির্দিষ্ট দিনসমূহে।}
[ আল বাকরা:২০৩]

কঙ্কর নিক্ষেপ করা আল্লাহর যিকরের মধ্যে শামিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,«নিশ্চয় বায়তুল্লাহর তাওয়াফ এবং সাফা-মারওয়ার সায়ী ও কঙ্কর নিক্ষেপ আল্লাহর যিকর বাস্তবায়নের উদ্দেশে বিধিবদ্ধ করা হয়েছে|

৬ - মাথা মুণ্ডন ও চুল ছোট করা। আল্লাহ তাআলা বলেন:

(لَتَدۡخُلُنَّ ٱلۡمَسۡجِدَ ٱلۡحَرَامَ إِن شَآءَ ٱللَّهُ ءَامِنِينَ مُحَلِّقِينَ رُءُوسَكُمۡ وَمُقَصِّرِينَ)

{তোমরা ইনশাআল্লাহ নিরাপদে তোমাদের মাথা মুণ্ডন করে এবং চুল ছেঁটে নির্ভয়ে আল-মাসজিদুল হারামে অবশ্যই প্রবেশ করবে।}
[সূরা আল ফাতহ:২৭]

৭ - বিদায়ী তাওয়াফ। ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,«মানুষদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে তাদের শেষ সাক্ষাৎ যেন হয় বায়তুল্লাহর সাথে, তবে তিনি ঋতুগ্রস্ত নারীর জন্য সুযোগ দিয়েছেন।»

হজ্বের সুন্নতসমূহ

হজ্বের রুকন ও ওয়াজিব ব্যতীত অন্যসব হজ্বকর্ম সুন্নতের মধ্যে শামিল। আর তা হলো নিম্নরূপ:

১- ইহরামের সময় গোসল করা।

২- একটি চাদর এবং সেলাইবিহীন লুঙ্গি পড়ে ইহরাম বাঁধা।

৩ - তালবিয়া পাঠ ও তালবিয়া পাঠের সময় আওয়াজ উঁচু করা।

৪ - আরাফায় গমনের পূর্বরাত মিনায় যাপন করা।

৫ - হাজরে আসওয়াদ ইস্তিলাম করা।

৬- তাওয়াফে কুদূম ও উমরার সময় ইযতিবা করা। ইযতিবা হলো ডান বগলের নিচে চাদর রেখে ডান কাঁধ উন্মুক্ত রাখা।

৭ -তাওয়াফে কুদূম ও উমরার তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করা। রমল হলো দ্রত পদে চলা।

৮ - কিরান ও ইফরাদ হজ্বকারীর তাওয়াফে কুদূম করা।

হজ্বের ওয়াজিবসমূহ

যে ব্যক্তি হজ্বের কোনো ওয়াজিব ছেড়ে দিল, দম যবেহ করে তাকে এর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

হজ্বের সুন্নতসমূহ

হজ্বের কোনো সুন্নত ছুটে গেলে দম দিতে হবে না। বরং হজ্ব শুদ্ধ বলে গণ্য হবে।