ব্যবসায়িক পণ্য
যা ক্রয়-বিক্রয় করে লাভ অর্জনের আশায় প্রস্তুত রাখা হয়
টাকা-পয়সা ব্যতীত সকলপ্রকার সম্পদই ব্যবসায়িক সম্পদ হতে পারে, যেমন গাড়ী, পোশাক, কাপড়, লোহা, কাঠ ইত্যাদি যা ব্যবসায়িক উদ্দেশে তৈরি অথবা সংরক্ষণ করা হয়।
ব্যবসায়িক পণ্যে যাকাত ফরজ; এর প্রমাণ আল্লাহ তাআলার বাণী :
(يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَنفِقُواْ مِن طَيِّبَٰتِ مَا كَسَبۡتُمۡ ٢٦٧ ) [البقرة:267]
{হে মুমিনগণ, তোমরা ব্যয় কর উত্তম বস্তু, তোমরা যা অর্জন করেছ} [আল বাকারা:২৬৭]
আলেমগণ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে ব্যবসায়িক পণ্যের কথা বলেছেন। আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেন:
(خُذۡ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡ صَدَقَةٗ ) [التوبة:103]
{তাদের সম্পদ থেকে সদকা নাও। এর মাধ্যমে তাদেরকে তুমি পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে।} [সূরা আত-তাওবা:১০৩]
আর ব্যবসায়িক সম্পদ হলো প্রকাশ্য সম্পদের মধ্যে একটি। সে হিসেবে এতে যাকাত ফরজ হওয়াটা স্বাভাবিক।
১- ব্যবসায়িক পণ্য নিসাব পরিমাণ হওয়া। আর নিসাব হিসাব করতে হবে সোনা ও রুপার মূল্যের নিরিখে।
২- এক বছর অতিক্রান্ত হওয়া।
৩- যা ব্যবসার উদ্দেশে রাখা হয়, অর্থাৎ যা বেচাকেনা করে অর্থোপার্জন উদ্দেশ্য হয়। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমলের নির্ভরতা নিয়তের ওপর।’(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম) আর যদি কেউ ব্যবসার উদ্দেশ্য বাতিল করে দিয়ে ব্যক্তিগত ব্যবহারের নিয়ত করে নেয় তবে যাকাতের বছর কর্তিত হয়ে যাবে। এরপর যদি আবার ব্যবসার নিয়তে ফিরে আসে তবে এ সময় থেকে নতুনভাবে বছর গোনা শুরু করতে হবে। আর যদি এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ছলচাতুরী করা উদ্দেশ্য হয়, তাহলে বছর কর্তিত হয়নি বলে ধরা হবে।
উদাহরণত: যদি কেউ মহররম মাসে ব্যবসায়িক উদ্দেশে একখণ্ড জায়গা খরিদ করে, এরপর শাবান মাসে নিয়ত পরিবর্তন করে তাতে নিজের থাকার বাড়ি তৈরি করার ইচ্ছাপোষণ করে, তাহলে যাকাতের বছর কর্তিত হয়ে যাবে। এরপর যদি শাওয়াল মাসে আবার ব্যবসার নিয়তে ফিরে আসে তাহলে এ মাস থেকে নতুন বছর শুরু হবে। কিন্তু যদি যাকাত থেকে অব্যাহতি নেয়ার জন্য ছলচাতুরীমূলক এরূপ করে থাকে, তবে যাকাতের বছর কর্তিত হয়নি বলে ধরা হবে এবং মহররম মাস থেকেই যাকাতের বছর হিসাব হবে।
যখন এক বছর অতিক্রান্ত হবে, বিক্রেয় পণ্যগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য কত তা হিসাব করতে হবে। এরপর গরীবদের প্রয়োজনীয়তার নিরিখে পণ্য অথবা পণ্যের মূল্য থেকে যাকাত প্রদান করতে হবে।
১ - ব্যবসায়ীর কাছে যেসব ব্যবসায়িক সম্পদ রয়েছে তা বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী মূল্যায়ন করতে হবে।
২ - ব্যবসায়ীর কাছে টাকা পয়সা যা আছে, চাই তা ব্যবসায় ব্যবহার করুক বা না করুক, তা ব্যবসায়িক সম্পদের সাথে যোগ করবে।
৩ - এর সাথে যোগ করবে আদায়ের নিশ্চয়তাযুক্ত ঋণের অংক।
৪- মোট সম্পদ থেকে ঋণের অংক বের করে আলাদা করবে।
৫ - অবশিষ্ট সম্পদ থেকে যাকাত বের করবে। আর তা হলো ২.৫%।
শেয়ার
শেয়ার হোল্ডিং কোম্পানির মূলধনের সম-অংশসমূহের একাংশ
উদাহরণ: একটি শেয়ার হোল্ডিং কোম্পানির মূলধন হলো ত্রিশ লাখ ডলার। কোম্পানি শুরু করার সময় মূলধনকে দশ হাজার ভাগে ভাগ করা হয়, প্রতি ভাগের মূল্য (৩০০) ডলার। এ অংশটিই হলো শেয়ার। আর যিনি শেয়ারের মালিক তিনি তার শেয়ার অনুযায়ী কোম্পানির মালিকানায়ও শরীক বলে গণ্য।
এটা বৈধ, যদি কোম্পানির কার্যক্রম হারামনির্ভর না হয় অথবা সুদী লেনদেন থেকে মুক্ত থাকে।
১- যদি কোম্পানি যাকাত প্রদান করে দেয় তবে শেয়ারধারী ব্যক্তির জিম্মাদারি আদায় হয়ে যাবে।
২- আর যদি কোম্পানি যাকাত প্রদান না করে, তাহলে শেয়ারের বাজারদর হিসাব করতে হবে। যদি তা নিসাব পরিমাণ হয় এবং তার ওপর এক বছর অতিক্রান্ত হয় তবে তাতে যাকাত ফরজ হবে। অর্থাৎ ২.৫% হারে যাকাত দিতে হবে; কেননা তা ব্যবসায়িক সম্পদ হিসেবে পরিগণিত।
উদাহরণস্বরূপ : এক ব্যক্তির কাছে ১০০০ শেয়ার রয়েছে। যাকাত বের করার দিন প্রতি শেয়ারের মূল্য ১০ ডলার। সে হিসেবে তার শেয়ারের মোট মূল্য দাঁড়াবে ১০০০০ ডলার। এটা নিসাব পরিমাণ সম্পদ থেকেও বেশি। তাই এক বছর অতিক্রান্ত হলে এর যাকাতপ্রদান আবশ্যক হবে।
মূলধনের যাকাতব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বিনিয়োগকৃত মূলধনে - যা বেচাকেনা করে লাভ অর্জন উদ্দেশ্য হয়ে থাকে - যাকাত প্রযোজ্য হবে। আর যা স্থাবর সম্পদ বলে বিবেচিত তাতে যাকাত ফরজ হবে না, যেমন জিনিসপত্র রাখার শেলফ, ফ্রিজ যাতে কোনো পণ্য হিফাজত করা হয়, গাড়ী যা পণ্য পরিবহনের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, পণ্য উঠানোর যন্ত্রপাতি ইত্যাদি যাকাতের হিসাবে আসবে না।
নিসাবের মালিক হওয়াপুরো বছরই কি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকতে হবে? নাকি বছরের শুরু ও শেষে যাকাতের নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকাটাই যথেষ্ট? না বছরের শেষে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলেই চলবে? এ ক্ষেত্রে মূল বিবেচনার বিষয় হলো বছরের শুরু ও শেষে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা; কেননা বছরব্যাপী সম্পদের হিসাব রাখা কষ্টকর। এ কারণেই বছরের শুরুটা হিসাবে আনা হবে, কেননা তখন যাকাত ফরজ হওয়ার কারণ সংঘটিত হয় এবং বছরের শেষটা হিসাব করা হবে, কেননা তখন যাকাত আদায়ের সময় হয়। আর মুসলমানের জন্য সহজ হলো একটি সময় নির্ধারণ করা, যাতে যাকাত প্রদানকারী তার সম্পদের মূল্যায়ন করবে এবং যাকাত আদায় করে দেবে, যেমন রমজান মাস।