খাদ্যশস্য ও ভূমি থেকে উৎপন্ন বস্তুর যাকাত

4819

 

ভূমি থেকে উৎপন্ন বস্তু

যা ভূমি থেকে উৎপন্ন হয় এবং উপকারে আসে।

প্রথমত: শস্য ও ফলফলাদি

খাদ্যশস্য

ভবিষ্যতের জন্য রেখে দেয়া যায় এমনসব খাদ্যশস্য, যেমন যব, গম, ধান ইত্যাদি।

ফল

ভবিষ্যতের জন্য রেখে দেয়া যায় এমনসব ফল, যেমন খেজুর, কিশমিশ ও কাঠবাদাম

খাদ্যশস্য ও ফলের যাকাত প্রদানের হুকুম

খাদ্যশস্য ও ফলের যাকাত প্রদান করা ফরজ। আল্লাহ তাআলা বলেন:

(এবং ফল কাটার দিনই তার হক আদায় করে দাও)
[ সূরা আলআনআম: ১৪১]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘যা আকাশ অথবা ঝর্নার পানি দ্বারা উৎপন্ন অথবা যা সেচ ব্যতীতই উৎপন্ন তাতে ১০% এবং যা নিজেদের শ্রম ব্যয় করে সেচ দেয়া হয়েছে তাতে ৫% যাকাত দিতে হবে।’(র্বণনায় বুখারী )

খাদ্যশস্য ও ফলে যাকাত ফরজ হওয়ার শর্তাবলী

১ - তা ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষিত হতে হবে। সে হিসেবে যদি ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষিত না হয় অথবা নিত্যদিনের খাবারে ব্যবহৃত হয়, তাহলে তাতে যাকাত ফরজ হবে না। কেননা যা ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করা যায় না, তা সম্পদ হওয়ার বৈশিষ্ট্যে পুরোপুরি উত্তীর্ণ হয় না।

২ - পরিমাপ-পাত্র দিয়ে মাপার উপযোগী হতে হবে। অর্থাৎ এমন হতে হবে যা মেপে ওসকের হিসাব বের করা যায়; কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘খাদ্যশস্য অথবা খেজুরে পাঁচ ওসকের নিচে যাকাত নেই।’(বর্ণনায় মুসলিম)আর যদি পরিমাপ-পাত্র দিয়ে মাপা না যায়, যেমন শাকসবজি, শিম, মটরশুঁটি ইত্যাদি তবে এগুলোতে যাকাত ফরজ হবে না।

৩ - বস্তুটি এমন হতে হবে যা মানুষ উৎপন্ন করে। সে হিসেবে যা নিজে নিজে উৎপন্ন হয় তাতে যাকাত নেই।

৪ - নিসাব পরিমাণ হওয়া:

এ ক্ষেত্রে নিসাব হলো পাঁচ ওসক। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

‘খাদ্যশস্য অথবা খেজুরে পাঁচ ওসকের নিচে যাকাত নেই।’(বর্ণনায় মুসলিম) ‘খাদ্যশস্য অথবা খেজুরে পাঁচ ওসকের নিচে যাকাত নেই।’।

শর্ত নয়

খাদ্যশস্য ও ফলের যাকাতে এক বছর অতিক্রান্ত হওয়া শর্ত নয়। এর প্রমাণ আল্লাহ তাআলার বাণী:

(وَءَاتُواْ حَقَّهُۥ يَوۡمَ حَصَادِهِۦۖ ) [الأنعام:141]

{এবং তোমরা ফল কাটার দিনই তার হক আদায় করে দাও} [ সূরা আল আনআম: ১৪১]

খাদ্যশস্য ও ফলের যাকাত ফরজ হওয়ার সময়

খাদ্যশস্য যখন শক্ত হয়ে ব্যবহারোপযোগী হয় আর ফল যখন পরিপক্ক হয়ে খাওয়ার উপযোগী হয় তখন তাতে যাকাত ফরজ হয়ে যায়। অতএব যদি কেউ যাকাত ফরজ হওয়ার পর খাদ্যশস্য বা ফল বিক্রি করে দেয়, তবুও তার কাঁধে যাকাত দেয়ার দায়িত্ব বহাল থেকে যাবে; কেননা যাকাত ফরজ হওয়ার সময় সে তার মালিক ছিল।

খাদ্যশস্য ও ফলে ফরজ হওয়া যাকাতের পরিমাণ

১ - বিনা পরিশ্রমে বৃষ্টি অথবা ঝর্নার পানির প্রাকৃতিক সেচে উৎপন্ন ফসলে যাকাতের পরিমাণ হলো উশর তথা (১০%)।

২ - শ্রমনির্ভর সেচ, যেমন কূপ ইত্যাদি থেকে পানি এনে সেচ দেয়া সাপেক্ষে যে ফসল উৎপন্ন হয় তাতে যাকাতের পরিমাণ হলো (৫%)।

৩ - আর উভয় ধরনের সেচ অর্থাৎ কখনো প্রাকৃতিক ও কখনো শ্রমনির্ভর সেচের মাধ্যমে উৎপন্ন ফসলে যাকাতের পরিমাণ হলো (৭.৫%)।

এর দলিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস, ‘যা আকাশ, নদী ও ঝর্না দ্বারা সেচকৃত তাতে উশর(১০%) এবং যা কূপ থেকে সেচ দেয়া হলো তাতে অর্ধ-উশর(৫%)।’(বর্ণনায় মুসলিম)

খাদ্যশস্য ও ফল ধ্বংস হয়ে যাওয়া

যদি খাদ্যশস্য ও ফল ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোনো কারসাজি বা হস্তক্ষেপ ব্যতীত ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে যাকাত রহিত হয়ে যাবে। কিন্তু যদি যাকাত ফরজ হওয়ার পর ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোনো কারসাজি বা হস্তক্ষেপের ফলে ধ্বংস হয় তবে যাকাত রহিত হবে না। বরং তা বলবৎ থাকবে।

মাসায়েল

১ - মধুর যাকাত নেই; কেননা এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কোনো নির্দেশ আসেনি। তবে যদি কেউ স্বেচ্ছায় যাকাত প্রদান করে তবে তা উত্তম হবে এবং তা মৌমাছি ও মধু বেড়ে যাওয়ার কারণ হবে। কিন্তু তা বাধ্যতামূলক নয়, যা পরিত্যাগ করলে কেউ গুনাহগার হবে।

২ - যে ব্যক্তি অন্যকারও ভূমি ভাড়া নিল এবং তাতে ফল উৎপন্ন করল, এমতাবস্থায় ভাড়াটে ব্যক্তির ওপর যাকাত ফরজ হবে, মূল মালিকের ওপর নয়।

৩ - যাকাত হিসেবে সরাসরি দ্রব্য না নিয়ে তার মূল্য নেওয়াও বৈধ রয়েছে। বরং প্রয়োজন ও জনস্বার্থের বিবেচনায় তাই হবে শরীয়তসিদ্ধ।

খনিজদ্রব্য ও গুপ্তধন

খনিজদ্রব্য

ভূমিজাত নয়, এমন যে দ্রব্যসমূহ ভূমি থেকে বের করা হয়, যেমন সোনা- রুপা, লোহা, সীসা এবং এ ধরনের অন্যান্য কাচামাল।

গুপ্তধন

অর্থাৎ মানুষ কর্তৃক ভূমিতে গচ্ছিত কোনো দ্রব্য, যেমন সোনা-রুপা ইত্যাদি।

খনিজদ্রব্য ও গুপ্তধনের যাকাতের হুকুম

এ সবের যাকাত দেয়া ফরজ। আল্লাহ তাআলা বলেন :

(يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَنفِقُواْ مِن طَيِّبَٰتِ مَا كَسَبۡتُمۡ وَمِمَّآ أَخۡرَجۡنَا لَكُم مِّنَ ٱلۡأَرۡضِۖ٢٦٧ )[البقرة:267]

{হে মুমিনগণ, তোমরা ব্যয় কর উত্তম বস্তু, তোমরা যা অর্জন করেছ এবং আমি জমিন থেকে তোমাদের জন্য যা উৎপন্ন করেছি তা থেকে} [সূরা আল বাকারা:২৬৭]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘গুপ্তধনে খুমুস (২০%) প্রদেয়।

গুপ্তধনের যাকাতের শর্তাবলী

গুপ্তধনের যাকাতের কোনো শর্ত নেই। যদি কোনো ব্যক্তি তার মালিক হয়ে থাকে তবে সরাসরি সে তার যাকাত প্রদান করবে।

খনিজদ্রব্য ও গুপ্তধনের যাকাতের পরিমাণ

এ জাতীয় দ্রব্য অল্প হোক বেশি হোক তাতে খুমুস তথা ২০% যাকাত প্রদেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী ‘গুপ্তধনে একপঞ্চমাংশ প্রদেয়’ এর প্রতিই নির্দেশ করে।