কুরবানী
কুরবানী করার দিনসমূহে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশে যবেহকৃত গবাদিপশু|
কুরবানী করা হানাফী মাযহাব অনুযায়ী সক্ষম ব্যক্তিদের ওপর ওয়াজিব, জমহুর ফুকাহার নিকট সুন্নতে মুয়াক্কাদা। আল কুরআনে এসেছে:
(فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ ٢ )
{অতএব তোমার রবের উদ্দেশ্যেই নামাজ পড় এবং কুরবানী কর।} [ সূরা আল কাউছার:২]
আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে,«রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিংবিশিষ্ট সাদা-কালো দুটি মেষ কুরবানী করেছেন। এ দুটি তিনি নিজ হাতে কুরবানী করেছেন। বিসমিল্লাহ বলেছেন ও তাকবীর দিয়েছেন। (যবেহ করার সময়) তিনি তাঁর পা এ দুটির ঘাড়ের একপাশে রেখেছেন।»(বর্ণনায় তিরমিযী)
দশ যিলহজ্ব ঈদের নামাজ আদায়ের পর থেকে আইয়ামে নহরের শেষ দিন অর্থাৎ হানাফী মাযহাব অনুযায়ী ১২ যিলহজ্ব আর জমহুর ফুকাহার নিকট ১৩ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত কুরবানী করা চলে।
১- একটি মেষ এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে শুদ্ধ হবে। তবে ছাওয়াবের ক্ষেত্রে যে কাউকে শরীক করা যাবে। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাঁর কুরবানী যবেহ করার ইচ্ছা করলেন, তিনি বললেন, «বিসমিল্লাহ। হে আল্লাহ, আপনি এ কুরবানী মুহাম্মাদ, মুহাম্মাদের পরিবার ও উম্মতে মুহাম্মাদির পক্ষ থেকে কবুল করুন।»(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)
২ - একটি উট বা গরু সাতজনের পক্ষ থেকে কুরবানী করা বৈধ। অর্থাৎ একটি উট বা গরুতে সাতজন শরীক হতে পারে। জাবের রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে, তিনি বলেন,«রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে উট ও গরুতে শরীক হতে বলেছেন। প্রতি সাতজন একটি উটে।»(বর্ণনায় মুসলিম)
ছয় মাস বয়সী ভেড়া
এক বছর বয়সী বকরী
দুই বছর বয়সী গরু
পাঁচ বছর বয়সী উট
পশু অন্ধ অথবা কানা হওয়া।
পশু অন্ধ অথবা কানা হওয়া।
শুকনো যাতে কোনো গোশত নেই।
এর দলিল বারা ইবনে আযেব রাযি. থেকে বর্ণিত হাদীস, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : «কুরবানীতে কানা পশু, যে স্পষ্টভাবেই কানা, লেংড়া পশু, যে স্পষ্টভাবেই লেংড়া , অসুস্থ পশু যে স্পষ্টভাবেই অসুস্থ, শুকনো পশু যাতে মজ্জা নেই, কুরবানী করা জায়েয হবে না।»(বর্ণনায় মুসলিম)
এসব দোষের সাথে, যা এসবের সদৃশ অথবা এসব থেকেও খারাপ, এ জাতীয় অন্যান্য দোষও যুক্ত হবে।
যার কান ফাটা অথবা অল্পপরিমাণ শিং ভাঙ্গা।
কুরবানীর পশু, জায়েয অথবা না-জায়েজ হওয়ার ব্যাপারে যা বলা হলো, হজ্বের হাদী ও ফিদয়ার ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হবে।
কুরবানীকারী একতৃতীয়াংশ কুরবানীর গোশত নিজের জন্য রেখে দিতে পারবে। একতৃতীয়াংশ হাদিয়া দেবে এবং একতৃতীয়াংশ সদকা করে দেবে। যদি পুরোটাই সদকা করে দেয় তবে শুদ্ধ হবে। যদি অধিকাংশ নিজের জন্য রেখে দেয় এতেও কোনো ক্ষতি হবে না।
১ - যবেহকৃত হাদীর গোশত যাতে অবহেলায় নষ্ট না হয়ে যায়, বরং এর যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত হয় এ ব্যাপারে সচেতন থাকা আবশ্যক। অনেক হাজ্বী এমন রয়েছেন যারা যবেহ করার জায়গাতে চামড়া ছুলানো অথবা গোশত কাটা ব্যতীতই তাদের কুরবানীকৃত পশু ফেলে রেখে চলে আসেন। এরূপ করা সমুচিত নয়।
২ - যে ব্যক্তি কুরবানী করতে চায় তার চুল কাটা, নখ কাটা অথবা গায়ের চামড়ার কোনো অংশ কাটা বৈধ নয়। যিলহজ্ব মাস শুরু হওয়ার পর থেকে যবেহ করা পর্যন্ত এসব থেকে বিরত থাকতে হবে। উম্মে সালামা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, «যখন যিলহজ্বের প্রথম দশক প্রবেশ করবে এবং তোমাদের কেউ কুরবানী করতে ইচ্ছা করবে তখন চুল ও চামড়ার কিছুতে সে হাত দেবে না।» (বর্ণনায় মুসলিম)
অবশ্য পরিবার-পরিজনের মধ্যে যাদের পক্ষ থেকে কুরবানী করা হয়, যেমন স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, তাদের উপর এসব বিষয়ের নিষেধাজ্ঞা নেই।