অজু করার নিয়ম ও অজুর মাসায়েল

91100

 

আভিধানিক অর্থে অজু

সৌন্দর্য ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা

শরীয়তের পরিভাষায় অজু

পবিত্রতা অর্জনের নিয়তে নির্দিষ্ট অঙ্গসমূহে পানি ব্যবহার করা

অজুর হুকুম

অজু করা হয়ত ফরজ অথবা মুস্তাহাব

ক) তিন কারণে অজু ফরজ হয়ে থাকে

১- নামাজ

আল্লাহ তাআলা বলেন,

(يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِذَا قُمۡتُمۡ إِلَى ٱلصَّلَوٰةِ فَٱغۡسِلُواْ وُجُوهَكُمۡ وَأَيۡدِيَكُمۡ إِلَى ٱلۡمَرَافِقِ وَٱمۡسَحُواْ بِرُءُوسِكُمۡ وَأَرۡجُلَكُمۡ إِلَى ٱلۡكَعۡبَيۡنِۚ )

{হে মুমিনগণ, যখন তোমরা সালাতে দন্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধৌত কর)।}[সূরা আল-মায়েদা : ৬]

২- কাবাঘরের তাওয়াফ

কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঋতুবতী মহিলাকে বলেছেন,

‘তুমি পবিত্র হওয়ার আগে তাওয়াফ করবে না।’(বর্ণনায় বুখারী)

৩- আল-কুরআন স্পর্শ করা

কারণ আল্লাহ তাআলা বলেছেন, (لَّا يَمَسُّهُۥٓ إِلَّا ٱلۡمُطَهَّرُونَ ) {পবিত্রগণ ব্যতীত কেউ তা স্পর্শ করে না।} [[আল ওয়াকিয়া: ৭৯]]

ক) উল্লিখিত সময় ছাড়া অন্যসময়ে অজু করা মুস্তাহাব

এর দলিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস,‘ঈমানদার ব্যক্তিই কেবল অজুর হেফাজত করে।’
(বর্ণনায় আহমাদ) সে হিসেবে নিম্নবর্ণিত জায়গাসমূহে অজু করা তাগিদসহ মুস্তাহাব:

প্রত্যেক নামাজের সময় অজু নবায়ন করা। আল্লাহ তাআলার যিকির ও দুআর সময়, কুরআন তেলাওয়াতের সময়, নিদ্রা যাওয়ার পূর্বে, গোসল করার পূর্বে অজু করা গুরত্বপূর্ণভাবে মুস্তাহাব। মৃত ব্যক্তিকে বহন করার পর ও প্রতিবার অজু ভঙ্গের পর অজু করা মুস্তাহাব, যদিও তখন নামাজ আদায়ের ইচ্ছা না থাকে।

অজুর ফজিলতসমূহ

১- অজু আল্লাহর ভালোবাসার কারণ

আল্লাহ তাআলা বলেন,

(إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلتَّوَّٰبِينَ وَيُحِبُّ ٱلۡمُتَطَهِّرِينَ)

{নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালবাসেন এবং ভালবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদের।} [সূরা আল বাকারা : ২২২]

২- অজু উম্মতে মুহাম্মাদীর আলামত; যেহেতু তারা কেয়ামতের দিবসে উজ্জ্বল অঙ্গ নিয়ে উপস্থিত হবে

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন আমার উম্মত অজুর অঙ্গগুলো উজ্জ্বল ঝলমলে অবস্থা নিয়ে উপস্থিত হবে। কাজেই তোমাদের যে এগুলো দীর্ঘ করতে চায় সে যেন তা করে নেয়।’(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম।)

৩- অজু গুনাহ ও পাপ মিটিয়ে দেয়।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে অজু করে এবং সুন্দরভাবে অজু করে তার শরীর থেকে পাপসমূহ বের হয়ে যায়। এমনকি নখের নীচ থেকেও বের হয়ে যায়।’
(বর্ণনায় মুসলিম। )

৪- মর্যাদা বেড়ে যাওয়া

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন বিষয় সম্পর্কে খবর দেব না যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা গুনাহ মিটিয়ে দেন ও মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? তারা বললেন, অবশ্যই বলবেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, ‘কষ্ট সত্ত্বেও অজু পূর্ণভাবে করা, মসজিদের দিকে বার বার পদচালনা করা, সালাতের পর সালাতের জন্য অপেক্ষা করা। এটা হলো রিবাত।’(বর্ণনায় মুসলিম।)

অজুর পদ্ধতি

১. অন্তরে অজুর নিয়ত করা।

২. বিসমিল্লাহ বলা।

৩. হাতের দু’কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা (তিনবার)।

৪. মেসওয়াক করা: এর সময় হলো কুলি করার মুহূর্তে।

৫. কুলি করা, নাকে পানি দেয়া, নাক ঝাড়া (তিনবার)।

কুলি করা অর্থ : মুখের মধ্যে পানি প্রবেশ করিয়ে নাড়াচাড়া করা

. নাকে পানি দেয়া অর্থ: নিশ্বাসের সাথে নাকের মধ্যে পানি টেনে নেয়া।

৭. নাক ঝাড়া অর্থ: নাকের ভিতর থেকে পানি বের করা।

৮. মুখমন্ডল ধৌত করা (তিনবার) দাড়ি খেলাল করাসহ।

৯. আঙ্গুলের মাথা থেকে কনুই পর্যন্ত ডান হাত তিনবার ধৌত করা। অতঃপর একইরূপে বাম হাত ধৌত করা।

১০. মাথা মাসেহ করা: আর তার পদ্ধতি হলো প্রথমে হাত পানি দিয়ে ভিজিয়ে নেয়া। এরপর মাথার সামনের দিক থেকে পিছনের দিকে চুলের শেষ সীমানা পর্যন্ত হাত বুলানো। এরপর পেছনের দিক থেকে সামনের দিকে হাত ফিরিয়ে আনা (একবার)।

১১. তর্জনী অঙ্গুলি দিয়ে কানের ভিতরে মাসেহ করা আর বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে কানের বাহিরের অংশ মাসেহ করা (একবার)।

১২. ডান পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করা (তিনবার) অতঃপর একইরূপে বাম পা ধৌত করা ।

১৩. অজু শেষ করার পর এই দুআ পাঠ করা :

أَشْهَدُ أَن لَّا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ اَللَّهُمَّ اجْعَلْنِيْ مِنَ التَّوَّابِيْنَ، وَاجْعَلْنِيْ مِن الْمُتَطَهِّرِيْنَ سُبْحَانَكَ اللهمَّ وَبِحَمْدِكَ، أَشْهَدُ أَن لَّا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ.

(অর্থ) ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই। তিনি এক, তার কোনো শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। হে আল্লাহ, আপনি আমাকে তাওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমাকে পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। হে আল্লাহ, আপনার প্রশংসাসহ আপনার মহত্ব বর্ণনা করছি। সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি আর তাওবা করছি আপনার কাছে।’
(বর্ণনায় নাসায়ী)

অজুর পদ্ধতি

অজুর শর্তাবলী

১- পানি পবিত্র হতে হবে।

২- পানি বৈধ হতে হবে। উদাহরণত কেউ যদি চুরি করা পানি দিয়ে অজু করে তবে তার অজু হবে না।

৩- যা কিছু ত্বকে পানি পেছাতে বাধা দেয় তা অজুর পূর্বে অপসারণ করে নিতে হবে, যেমন চর্বি ইত্যাদি।

অজুর ফরজসমূহ

১- মুখমন্ডল ধৌত করা।

২- দু’হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করা।

৩- দু’পা টাখনুসহ ধৌত করা।

৪- মাথা মাসেহ করা।

হানাফী মাযহাবে স্বীকৃত এ সকল ফরজের সাথে ইমামদের কেউ কেউ আরো কয়েকটি ফরজ যোগ করেছেন। আর তা হলো:

৫- নিয়ত করা: নিয়তের স্থান হলো অন্তর। নিয়ত মুখে উচ্চারণ করার বিষয় নয়। অজুর নিয়ত ব্যতীত কেউ যদি শীতলতা অর্জন অথবা পরিচ্ছন্নতা অর্জনের জন্য অজুর অঙ্গগুলো ধৌত করে তাহলে তা অজু বলে গণ্য হবে না।

৬- অঙ্গ-প্রত্যাঙ্গগুলো ধৌত করার সময় ক্রম বজায় রাখা।

৭- অঙ্গ-প্রত্যাঙ্গগুলো ধৌত করতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা, ধৌত করতে এতটা দেরি না করা যে আগের ধোয়া অঙ্গটি শুকিয়ে যায়।

অজুর সুন্নতসমূহ

১- অজুর শুরুতে দু’হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করা

২- মেসওয়াক করা।

৩- মাথা ও কান বাদে প্রত্যেকটি অঙ্গ তিনবার ধৌত করা। মাথা কেবল একবার মাসেহ করা।

৪- ডান দিক অনুসরণ: অর্থাৎ অঙ্গগুলো ধৌত করার সময় ডানের অঙ্গ দিয়ে শুরু করা।

৫- উজ্জ্বলতা দীর্ঘ করা: অর্থাৎ হাত ধৌত করার সময় কনুই ছাড়িয়ে আরো একটু ধৌত করা।

৬- হাত ও পায়ের আঙ্গুলসমূহের মধ্যবর্তী স্থানগুলো মাসেহ করা।

৭- যেসকল অঙ্গ ধৌত করতে হয় তা হাত বুলিয়ে ধৌত করা। পানি ছিটিয়ে দেয়া যথেষ্ট নয়।

৮- পানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়া; নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘এ উম্মতের মধ্যে এমন এক সম্প্রদায় হবে যারা পবিত্রতা অর্জনে সীমালঙ্গন করবে।
(বর্ণনায় আবু দাউদ।)(অর্থাৎ অজুর সময় পানি অপচয় করবে।)

অজুর পর দুআ পাঠ করা : নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের যে কেউ সুন্দর করে পরিপূর্ণভাবে অজু করবে অতঃপর বলবে,

أَشْهَدُ أَن لَّا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُ اللهِ وَرَسُولُهُ، اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ وَاجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَطَهِّرِينَ،.


(অর্থ) (‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই। তিনি এক, তার কোনো শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তার বান্দা ও রাসূল। হে আল্লাহ, আপনি আমাকে তাওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন।’তাহলে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। যেকোনো দরজা দিয়ে ইচ্ছা করবে প্রবেশ করতে পারবে।)(বর্ণনায় তিরমিযী)

৯- অজুর পর দু’রাকাআত নামাজ আদায় করা। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার এ অজুর মত করে অজু করবে এরপর এমনভাবে দু’রাকাআত নামাজ আদায় করবে যাতে অন্যকোনো চিন্ত-কল্পনা ছিল না, তাহলে তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’
(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম।)

অজু ভঙ্গের কারণসমূহ

১- মলদার ও লজ্জাস্থান থেকে যা কিছু বের হয়, যেমন পেশাব, পায়খানা, বায়ু ইত্যাদি অজু ভঙ্গের কারণ। কেননা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘অজু ভঙ্গ হওয়ার কারণ ঘটে যাওয়ার পর অজু করার পূর্বে তোমাদের কারো নামাজ আল্লাহ কবুল করেন না।’

২- গভীর ঘুম, যাতে অনুভুতি থাকে না। বেহুশ হওয়া, পূর্ণ মাতাল হওয়া ইত্যাদির হুকুমও গভীর ঘুমের হুকুমের মতোই।

৩- মুখ ভরে বমি করা। কারণ আবু দারদা রাযি. এর এক বর্ণনা অনুযায়ী, ‘নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বমি করলেন অতঃপর রোজা ভঙ্গ করলেন, এবং অজু করলেন।’
(বর্ণনায় তিরমিযী)

৪- বয়স্ক জাগ্রত ব্যক্তি রুকু সিজদাবিশিষ্ট নামাজে নামাজরত অবস্থায় যদি অট্টহাসি হাসে তাহলে অজু ও নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অট্ট হাসি হেসেছে সে যেন অজু ও নামাজ আবার আদায় করে নেয়। (বর্ণনায় দারা কুতনী)

৫- প্রবাহমান রক্ত। এর প্রমাণ হলো ‘আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাযি. এর নাক থেকে যখন রক্ত পড়ত, তখন তিনি ফিরে এসে অজু করে নিতেন অতঃপর নামাজ পূর্ণ করতেন,এর মাঝে কোনো কথা বলতেন না।’ (ইমাম মালেক রহ. তার মুয়াত্তা কিতাবে বিশুদ্ধ সুত্রে উক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)

মাসায়েল

১- যখন কোনো মুসলিম নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয়ে অজু করতে চায় তখন যেন সে তার হাত পানির পাত্রে ঢুকিয়ে না দেয়। বরং তিনবার হাত ধুয়ে নেয়ার পর হাত ঢুকাবে। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ নিদ্রা থেকে জাগ্রত হলে সে যেন তিনবার হাত ধৌত করার আগে তার হাত পাত্রের মধ্যে না ঢুকায়। কেননা সে জানে না তার হাত কোথায় রাত কাটিয়েছে।’

২- অজুতে যেসকল অঙ্গ ধৌত করা জরুরি তার প্রত্যেকটিতে ভালোমতো পানি পেছাতে হবে। বিশেষ করে হাত ও পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে, দাড়ির ও কানের মধ্যবর্তী জায়গায়। এমনিভাবে দুই কনুই ও পায়ের গোড়ালিতে। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পায়ের গোড়ালির জন্য জাহান্নামের আগুনের হুমকি রয়েছে।’

৩- ইয়াকীন বা দৃঢ় বিশ্বাসের ভিত্তি হলো প্রতিটি বিষয়ের ক্ষেত্রে মৌলিক গুরুত্বের ব্যাপার। সে হিসেবে যদি তাহারাত বা পবিত্রতা অর্জনের কথা দৃঢ়ভাবে মনে থাকার পর অজু ভেঙ্গে গেছে বলে সন্দেহ হয়, তাহলে দৃঢ় বিশ্বাসের ওপর স্থিত বিষয়টিকেই প্রাধান্য দিতে হবে। আর সেটা হলো তাহারাত। আর যদি তাহারাত অর্জন করেনি মর্মে দৃঢ় বিশ্বাস থাকে আর অজু করেছে বলে সন্দেহ হয় তাহলে তাহারাত অর্জন না করার বিষয়টিই প্রাধান্য পাবে।

৪- যদি কোনো মুসলিম এমনভাবে অজু করে যে, কোনো অঙ্গ একবার আবার কোনোটি দু’বার আবার কোনোটি তিনবার ধৌত করে তাহলেও অজু শুদ্ধ হবে।

৫- যে ব্যক্তি ভুলে অজু ব্যতীত নামাজ আদায় করেছে, সে তা স্মরণ করামাত্র নামাজ আবার পড়ে নেবে।

৬- অজু করার পর যদি কোনো নাপাকি লেগে যায়, তাহলে নাপাকি দূর করে নেবে। অজু করতে হবে না। কারণ নাপাকি লেগে যাওয়াটা অজু ভঙ্গের কারণ নয়।

অজু ও সাধারণ স্বাস্থ্য

জাতিসংঘ কর্তৃক প্রকাশিত সোর্স মাগ্যাজিনে প্রকাশিত হয়েছে যে, নিয়মিত গোসল ও ইসলামি সমাজে নামাজের জন্য অজু টেরাকোমা রোগ থেকে সুরক্ষা পেতে সাহায্য করে। এ রোগটি তৃতীয় বিশ্বে অন্ধত্বের কারণ হিসাবে ধরা হয়ে থাকে। বিশ্বের প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। যদি তারা নামাজপূর্ব পরিচ্ছন্নতা অর্জনের পদ্ধতি অনুসরণ করে তাহলে এ রোগ থেকে নিরাপদ থাকা যায়। দেখা গেছে ইসলামি সমাজে এ রোগটির প্রাদুর্ভাব কম। বরং নেই বললেই চলে।(আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে তিব্বে নববী‘গিয়াস আল-আহমাদ’)

যা উচিত নয়

১- অজুর সময় মুখে নিয়ত উচ্চারণ করা।

২- পানি অপচয় করা।

৩- অজুতে তিনবারের বেশি ধৌত করা। কারণ হাদীসে এসেছে, ‘এক বেদুইন ব্যক্তি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অজু সম্পর্কে প্রশ্ন করল। তিনি তাকে তিনবার তিনবার করে ধৌত করে অজু দেখালেন। এরপর বললেন, অজু এরকমই। যে ব্যক্তি এর চেয়ে বাড়াবে সে খারাপ করল, সীমা লংঘন করল ও জুলুম করল।’
(বর্ণনায় আবু দাউদ।)

কিন্তু যদি অঙ্গটি তিনবার ধৌত করার পর পরিষ্কার না হয় তাহলে তিনবারের বেশি ধৌত করা জায়েয হবে। যেমন হাতে চর্বি ইত্যাদি লেগে থাকার ক্ষেত্রে।

অজু পূর্ণ না করার মধ্যে যা গণ্য

ক - পায়ের গোড়ালি ধৌত না করা।

খ- কনুই ধৌত না করা; জামার হাতা সংকীর্ণ হওয়ার কারণে।

গ- কান ও দাড়ির মধ্যবর্তী অংশ ধৌত না করা।

ঘ- বাম হাত ধৌত করার সময় বাম হাতের কব্জি না ধোয়া।

ঙ- শরীরে চর্বি জাতীয় পদার্থ থাকাবস্থায় অজু করা।

চ- আঙ্গুলে নেইল পালিশ থাকাবস্থায় মহিলাদের অজু করা, যা পানি পেছাতে বাধা দেয়।

ছ- স্বাভাবিকভাবে পানি না পৌঁছা সত্ত্বেও পায়ের আঙ্গুলগুলো খেলাল না করা।

৫- ঘাড় মাসেহ করা:

এটা অজুর কোনো বিষয় নয়। যদি তা মাসেহ করা কোনো কারণে প্রয়োজন হয় তাহলে তা অজুর আগে বা পরে করা যেতে পারে।