আভিধানিক অর্থে নুসুক
দুনিয়া-বিমুখিতা ও ইবাদত-বন্দেগী
শরয়ী পরিভাষায় নুসুক
হজ্ব ও উমরাকারী যা বলে ও করে
যখন ইহরাম বাঁধতে ইচ্ছুক ব্যক্তি গোসল ও পরিচ্ছন্নতা অর্জন থেকে ফারেগ হবে এবং সেলাইযুক্ত পোশাক পরিত্যাগ করে ইহরামের কাপড় পরে নেবে, তখন সে হজ্ব অথবা উমরায় প্রবেশের নিয়ত করবে। এ সময় সে যে ধরনের হজ্বের নিয়ত করবে, তা মুখে উচ্চারণ করে বলবে। যেমন প্রথমে উমরা এবং পরে তামাত্তুকারী হিসেবে হজ্ব করার ইচ্ছা করলে বলবে: لبيك اللهم عمرة متمتعاً بها إلى الحج (হে আল্লাহ, আমি উমরার নিয়তে হাজির, যার দ্বারা আমি হজ্ব পর্যন্ত তামাত্তুকারী হব।) অথবা বলবে: لبيك اللهم عمرة (হে আল্লাহ, আমি উমরার নিয়তে হাজির।) এরপর হজ্বের সময় বলবে لبيك اللهم حجاً (হে আল্লাহ, আমি হজ্বের নিয়তে হাজির।) আর ইফরাদ হজ্বকারী বলবে: لبيك اللهم حجاً (হে আল্লাহ, আমি হজ্বের নিয়তে হাজির।) আর কেরান হজ্বকারী বলবে: لَبَّيْكَ عُمْرَةً وَحَجًّا হে আল্লাহ, আমি উমরা ও হজ্বের নিয়তে হাজির। এর প্রমাণ আনাস রাযি. এর বর্ণনা,«আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, « لَبَّيْكَ عُمْرَةً وَحَجًّا» হে আল্লাহ, আমি উমরা ও হজ্বের নিয়তে হাজির।»
আর তা হলো হজের মাসসমূহে উমরার উদ্দেশে ইহরাম বাঁধবে, অতঃপর উমরা আদায় করে শেষ করবে ও হালাল হয়ে যাবে। এরপর একই বছর হজ্বের নিয়ত করবে।
কেরান হলো হজ্ব ও উমরা উভয়টার জন্য একসাথে নিয়ত করা।
হজ্ব হলো উমরা ব্যতীত শুধু হজ্বের নিয়ত করা।
সর্বোত্তম নুসুক
যে ব্যক্তি হাদী নিয়ে এসেছে, তার জন্য সর্বোত্তম নুসুক হলো কিরান, এরপর তামাত্তু এরপর ইফরাদ। আর যে হাদী নিয়ে আসেনি, তার জন্য উত্তম নুসুক হলো তামাত্তু, এরপর কিরান, এরপর ইফরাদ।
তামাত্তু |
কেরান |
ইফরা` |
|
বর্ণনা |
প্রথমে উমরা, এরপর হজ্ব |
উমরা ও হজ্ব |
শুধু হজ্ব |
ইহরাম |
তামাত্তুকারীকে দুইবার ইহরাম বাঁধতে হয়। প্রথমে উমরার জন্য । এরপর উমরা আদায় করে হালাল হয়ে গেলে পরবর্তীতে হজ্বের জন্য। |
হজ্ব ও উমরা উভয়টার নিয়তে একবার ইহরাম বাঁধবে |
শুধু হজ্বের নিয়তে একবার ইহরাম বাঁধবে |
তালবিয়া |
প্রথম ইহরামের সময় বলবে, « لبيك عمرة» হে আল্লাহ, আমি উমরার নিয়তে হাজির। এরপর হজ্বের ইহরামের সময় বলবে, « لبيك حجاً» (হে আল্লাহ, আমি হজ্বের নিয়তে হাজির।) অথবা বলবে, لبيك عمرة متمتعاً بها إلى الحج « হে আল্লাহ আমি উমরার নিয়তে হাজির যার দ্বারা আমি তামাত্তু হজ্ব করব»। |
ইহরামের বলবে, لبيك عمرة وحجاً (হে আল্লাহ, আমি উমরা ও হজ্বের নিয়তে হাজির)। |
ইহরামের সময় বলবে: (لبيك حجا) হে আল্লাহ, আমি হজ্বের নিয়তে হাজির)। |
হাদী (কুরবানী) |
এতে হাদী (কুরবানী) ওয়াজিব হবে |
এতে হাদী (কুরবানী) ওয়াজিব হবে |
এতে হাদী (কুরবানী) ওয়াজিব হবে না |
তাওয়াফ |
এতে দুটি তাওয়াফ রয়েছে |
এতে একটি আবশ্যক তাওয়াফ রয়েছে আর তা হলো হজ্বের তাওয়াফ |
এতে একটি তাওয়াফ আবশ্যক তাওয়াফ রয়েছে আর তা হলো হজ্বের তাওয়াফ |
সায়ী |
এতে দুটি সায়ী রয়েছে, |
এতে মাত্র একটি সায়ী বয়েছে, আর তা হলো হজ্বের সায়ী। |
এতে মাত্র একটি সায়ী রয়েছে আর তা হলো হজ্বের সায়ী |
তালবিয়া
মুহরিমের কথা,« لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لاَ شَرِيكَ لَكَ «আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি হাজির। আপনার কোনো শরীক নেই। নিশ্চয়ই প্রশংসা ও নেয়ামত আপনার এবং রাজত্বও, আপনার কোনো শরীক নেই।
এর প্রমাণ ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত হাদীস যেখানে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তালবিয়াকে উল্লিখিতভাবে বর্ণনা করেছেন।
আর لبيك اللهم لبيك এর অর্থ (আপনার আহবানে) জওয়াবের পর জওয়াব।
তালবিয়াতে রয়েছে আল্লাহর প্রশংসা ও শুকরিয়া, আল্লাহার আহবানে সাড়াদান, আল্লাহর একত্ববাদের প্রকাশ এবং শিরক থেকে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা।
তালবিয়া পড়া সুন্নত। পুরুষের ক্ষেত্রে উঁচু স্বরে এবং নারীর ক্ষেত্রে ফিতনা থেকে বেঁচে থাকার জন্য নিচু স্বরে তালবিয়া পাঠ করা বাঞ্ছনীয়।
ইহরামের মাধ্যমে হজ্বকর্মে প্রবেশের পর মুহরিম ব্যক্তি তালবিয়া পাঠ শুরু করবে। হজ্বে গমনের পথে তা বেশি বেশি পড়বে। আর নিম্নবর্তী জায়গাসমূহে তা অধিক গুরুত্বসহ পড়বে:
উঁচুতে আরোহণের সময়, নিচুতে নামার সময়, ফরজ নামাজ শেষে, যখন দিন অথবা রাতের আগমন ঘটে|
উমরার ক্ষেত্রে তালবিয়া বন্ধ হবে যখন বায়তুল্লাহ দেখবে ও উমরার তাওয়াফ শুরুর উদ্দেশে হাজরে আসওয়াদ ইস্তিলাম করবে। আর হজ্বের ক্ষেত্রে যখন দশ যিলহজ্ব বড় জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ শুরু করবে|