মেসওয়াক ও স্বভাবজাত সুন্নতসমূহ

5302

 

স্বভাবজাত সুন্নতসমূহ

যেসকল প্রকৃতিগত স্বভাব দিয়ে আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, তা হলো নিম্নরূপ:

আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দশটি বিষয় হলো মানুষের প্রকৃতিগত স্বভাব: গোঁফ কর্তন করা, দাড়ি বড় হতে দেয়া বা ছেড়ে দেয়া, মেসওয়াক করা, নাকের ভিতর শ্বাসের সাথে পানি নেয়া, নখ কাটা, আঙ্গুলের গিরা ধৌত করা, বগলের পশম উপড়ানো, নাভির নিম্নদেশে ক্ষৌরকর্ম, পায়খানা বা পেশাবের পর পানি ব্যবহার করা ও কুলি করা।’(বর্ণনায় মুসলিম)

১- মেসওয়াক করা

মেসওয়াক করা সবসময় সুন্নত, কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মেসওয়াক হলো মুখের পবিত্রতা ও প্রতিপালকের সন্তুষ্টি।’(বর্ণনায় মুসলিম)

তবে নিম্নোক্ত সময়গুলোয় মেসওয়াক করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ:

১- অজু ও নামাজের সময়

কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর না হত তাহলে প্রত্যেক অজুর সময় আমি তাদের মেসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।’(বর্ণনায় মুসলিম)

তিনি আরো বলেছেন,‘যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর না হত তাহলে প্রত্যেক নামাজের সময় আমি তাদের মেসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।’(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)

২- ঘরে প্রবেশের সময়

মিকদাম তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘আমি আয়েশা রাযি. কে প্রশ্ন করলাম, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ঘরে প্রবেশ করতেন তখন প্রথম কি কাজ করতেন? তিনি বললেন, ‘মেসওয়াক করতেন।’(বর্ণনায় মুসলিম)

৩- ঘুম থেকে জাগার পর মেসওয়াক করা

হুযাইফা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন রাতে জাগ্রত হতেন তখন মেসওয়াক দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতেন।’(বর্ণনায় বুখারী)

৪- আল কুরআন তেলাওয়াতের সময় মেসওয়াক করা

আলী রাযি. থেকে বর্ণিত যে, তিনি মেসওয়াক করতে নির্দেশ দিয়েছেন আর বলেছেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষ যখন মেসওয়াক করে, অতঃপর সালাতে দাঁড়ায় তখন ফেরেশতাগণ তার তেলাওয়াত শোনার জন্য তার পিছনে দাঁড়ায়। তাঁরা তার কাছে চলে আসে। এমনিভাবে তাঁদের মুখ তার মুখের কাছে রাখে। তার মুখ থেকে কুরআনের যা কিছু বের হয় তা ফেরেশতাদের মুখে যায়। অতএব তোমরা আল কুরআনের জন্য নিজেদের মুখ পরিষ্কার করো।’(বর্ণনায় বাযযার)

মেসওয়াকের উপকারিতা

মেসওয়াক দুনিয়াতে মুখের পরিচ্ছন্নতা আর আখেরাতে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি। এটি দাঁতকে মজবুত করে। মাড়িকে শক্ত রাখে। কণ্ঠস্বরকে পরিষ্কার করে আর মানুষকে উদ্যমী করে।

২- কুলি করা ও নাকে পানি দেয়া

কুলি করা

মুখের মধ্যে পানি প্রবেশ করিয়ে নাড়াচাড়া করা

নাকে পানি দেয়া

শ্বাসের মাধ্যমে নাকের মধ্যে পানি টেনে নেয়া

৩- ইস্তেন্জা

ইস্তেন্জা

ইস্তেন্জা হলো মলদ্বার ও লজ্জাস্থান থেকে নির্গত ময়লার প্রভাব পবিত্র পানি দ্বারা পরিষ্কার করা।

৪- গোঁফ কাটা ও ছোট করা

অধিক ছোট করা বাঞ্ছনীয়; কারণ এতে রয়েছে সৌন্দর্য ও পরিচ্ছন্নতা ও কাফেরদের বিরোধীতা।

৫- দাড়ি ছেড়ে দেয়া

আর তা হলো দাড়ি কর্তন না করা এবং দাড়ির পিছনে না লাগা।

দাড়ি মুন্ডানো

দাঁড়ি মুণ্ডানো নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে হাদীসে স্পষ্ট নির্দেশনা এসেছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘গোঁফ কেটে ছোট করো আর দাড়ি ছেড়ে দাও, অগ্নিপূজকদের বিরোধিতা করো।’(বর্ণনায় মুসলিম)

৬- নাভির নীচে ক্ষৌরকর্ম করা

নাভির নীচে ক্ষৌরকর্ম করা

লজ্জাস্থানের পার্শ্ববর্তী কেশ মুণ্ডানো

নাভির নীচে ক্ষৌরকর্মের উপকারিতা

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত যে, নাভির নীচের কেশ পরিষ্কার করা স্বাস্থ্য, শরীরের শক্তি ও সুরক্ষার কারণ। এ অঞ্চলে কেশের আধিক্য বিভিন্ন রকম চর্মরোগ সৃষ্টির কারণ হিসাবে ভূমিকা রাখে।

৭- খতনা ও খিফায

পুরুষাঙ্গের খতনা

যে চামড়া পুরষাঙ্গের মাথা ঢেকে রাখে তা অপসারণ করা।

মেয়েদের খিফায

লজ্জাস্থানের যেজায়গা দিয়ে পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করে তার উপরের অতিরিক্ত মাংশ কেটে ফেলা

খতনা পুরুষের জন্য আর খিফায মেয়েদের জন্য। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মে আতিয়া রাযি. কে বলেছেন, ‘খিফায করো, তবে বেশি কেটোনা। কেননা তা সৌন্দর্যবর্ধক ও পুরষের কাছে অধিক সম্মানিত হওয়ার কারণ।’(বর্ণনায় হাকেম)

কিন্তু পুরুষদের জন্য খতনা ওয়াজিব আর নারীদের জন্য সুন্নত।

খতনা করার হিকমত হলো পুরুষাঙ্গের মাথায় চামড়া থাকার কারণে যে ময়লা জমে তা থেকে পুরুষাঙ্গ পরিষ্কার রাখা। আর নারীদের ক্ষেত্রে খিফাযের হেকমত হলো সৌন্দর্য বৃদ্ধি।

৮- নখ কাটা

অর্থাৎ নখ কেটে ফেলা এবং তা এমনভাবে ছেড়ে না দেয়া যে তা লম্বা হয়ে যায়।

৯- বগলের কেশ উপড়ে ফেলা

অর্থ্যাৎ বগলে উদিত কেশ দূর করা। এতে পরিচ্ছন্নতার বাধা দূর হবে আর কেশ থাকার কারণে যে দুর্গন্ধ হয় তা চলে যাবে।

১০- আঙ্গুলের পৃষ্ঠদেশের গিরাসমূহ ধৌত করা

অনেক আলেম উল্লিখিত বিষয়গুলোর সাথে কান, ঘাড় ও শরীরের

অন্যান্য ময়লা দূর করার বিষয়টি যোগ করেছেন।

চল্লিশদিন

চল্লিশদিনের বেশি নখ, বগল, নাভির নিম্নাংশ ও গোঁফ পরিষ্কার না করা মাকরূহ। আনাস ইবনে মালেক রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোঁফ কাটা, নখ কাটা, নাভির নিচের কেশ মুণ্ডানো, বগলের কেশ মুণ্ডানোর জন্য আমাদের সময় বেঁধে দিয়েছেন। আমরা যেন চল্লিশদিনের বেশি এগুলো ছেড়ে না রাখি।’(বর্ণনায় তিরমিযী)