কুসুফ ও খুসুফ বা সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের নামায

32604

 

কুসুফ (সূর্যগ্রহন)

কুসুফ হলো সূর্যের আলো সম্পূর্ণরূপে অথবা আংশিকভাবে বাধাপ্রাপ্ত হওয়া।

খুসুফ (চন্দ্রগ্রহন)

খুসুফ চাঁদের আলো সম্পূর্ণরূপে অথবা আংশিকভাবে বাধাপ্রাপ্ত হওয়া।

কুসুফ ও খুসুফের হিকমত

এ দুটি আল্লাহ তাআলার নিদর্শন, যার দ্বারা তিনি তাঁর বান্দাদেরকে ভয় দেখান, যাতে তারা পুনরায় তাঁর কাছে ফিরে যায়। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, «নিশ্চয় সূর্য ও চাঁদ কারও মৃত্যু অথবা জীবিত থাকার কারণে আলোহীন হয় না। এ দুটো বরং আল্লাহ তাআলার নিদর্শনসমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন, যার দ্বারা আল্লাহ তার বান্দাদেরকে ভয় দেখান। অতঃপর যখন এ দুটোয় গ্রহণ লাগে তোমরা তখন নামাজের দিকে দ্রুত আগাও।»(বর্ণনায় আবু দাউদ)

কুসুফ ও খুসুফের নামাজ

কুসুফ ও খুসুফের নামাজের হুকুম

সুন্নতে মুয়াক্কাদা। «হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,«নিশ্চয় চাঁদ ও সূর্য আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। কারও মৃত্যু বা জীবনের কারণে এ দুটোয় গ্রহন লাগে না। অতএব তোমরা যখন তা দেখবে আল্লাহকে ডাকো, তাকবীর দাও, নামাজ পড়ো ও সদকা করো।»(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)

কুসুফ ও খুসুফের নামাজের সময়

-কুসুফ ও খুসুফ শুরু হওয়া থেকে শেষ হওয়া পর্যন্ত

- মুসল্লী তার নামাজ পূর্ণ করে নেবে যদিও কুসুফ ও খুসুফ অতিক্রান্ত হয়ে যায়। আর যদি নামাজ পড়ে শেষ করা হয়, কিন্তু কুসুফ ও খুসুফ বলবৎ থাকে তাহলে আবার নামাজ আদায়ের প্রয়োজন নেই। বরং দুআ ও ইস্তিগফারে লিপ্ত থাকলেই চলবে।

কুসুফ ও খুসুফের নামাজের আদায় পদ্ধতি

আয়েশা রাযি. বলেন, (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে একবার সূর্য গ্রহণ লাগল। তখন তিনি লোকজন নিয়ে নামাজ পড়লেন। তিনি দীর্ঘ কিয়াম করলেন। এরপর তিনি রুকু করলেন ও রুকুতে দীর্ঘক্ষণ থাকলেন। অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘক্ষণ কিয়াম করলেন। এটা রুকুর পূর্বের কিয়ামের অতিরিক্ত। তারপর আবার রুকু করলেন এবং রুকুতে দীর্ঘক্ষণ থাকলেন। এটা প্রথম রুকুর অতিরিক্ত। তারপর তিনি সিজদা করলেন এবং সিজদায় দীর্ঘক্ষণ থাকলেন। তিনি দ্বিতীয় রাকাতেও প্রথম রাকাতের মতোই করলেন। অতঃপর গ্রহণ কেটে যাওয়ার পর তিনি নামাজ বন্ধ করলেন। এরপর তিনি মানুষের সামনে বক্তৃতা করলেন। তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণাবলী বর্ণনা করে বললেন নিশ্চয় সূর্য ও চাঁদ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের দু»টি নিদর্শন।কারো মৃত্যু বা জীবনের কারণে এদের গ্রহণ লাগে না। সুতরাং তোমরা যখন তা দেখবে, তখন আল্লাহকে ডাকবে, তাকবীর দেবে, নামাজ পড়বে এবং সদকা করবে।)(বর্ণনায় বুখারী)

অতএব যদি চাঁদ অথবা সূর্য গ্রহণ লাগে, তা হলে «আস্সালাতু জামেয়া অর্থাৎ একত্রে নামাজ আদায় হবে বলে নামাজের জন্য ডাক দিতে হবে।

মানুষ যখন জমায়েত হবে তখন ইমাম তাদের নিয়ে দীর্ঘ দু রাকাত নামাজ পড়বে। প্রকাশ্য আওয়াজে কিরাত পড়বে। প্রথম রাকাতে পড়বে সূরা ফাতিহা এবং অপর একটি দীর্ঘ সূরা। এরপর রুকু দেবে ও দীর্ঘ সময় রুকুতে থাকবে। এরপর سمع الله لمن حمده، ربنا ولك الحمد বলে মাথা উঠাবে। এরপর সূরা ফাতিফা পড়ে অপর একটি দীর্ঘ সূরা তার সঙ্গে মিলাবে, যা হবে প্রথমটির চেয়ে ছোট। এরপর রুকু দেবে এবং রুকুতে গিয়ে দীর্ঘ সময় থাকবে, তবে প্রথমটির চেয়ে একটু কম সময় থাকবে। এরপর দীর্ঘ দুই সিজদা করবে। এ দুই সিজদার মাঝখানে বসবে। তবে বৈঠক দীর্ঘ করবে না। এরপর দ্বিতীয় সিজদা থেকে তাকবীর দিয়ে মাথা উঠাবে। অতঃপর দ্বিতীয় রাকাত, কিয়াম ও রুকু সিজদায়, প্রথম রাকাতের মতোই আদায় করবে। তবে সবকিছুই পরিমাণে প্রথম রাকাতের চেয়ে কম হবে। এরপর বসবে ও তাশাহ্হুদ পড়বে ও সালাম ফিরাবে।

আহলে ইলমের কেউ কেউ প্রতি রাকাআতে এক রুকু করার কথা বলেছেন।

কুসুফ ও খুসুফের নামাজের সুন্নতসমূহ

১. কুসুফের নামাজ জামাতের সাথে পড়া হবে। কিন্তু যদি কেউ একাকী পড়তে চায় তবে তাও শুদ্ধ হবে।

২. এ নামাজদ্বয় মসজিদে আদায় করতে হবে। আর নারীরাও এতে অংশ নিতে পারবে।

৩. কিয়াম, রুকু ও সিজদা সবকিছুই দীর্ঘায়িত করে নামাজ পড়বে। তবে যদি গ্রহণ চলে যায় তা হলে দ্রুত শেষ করে দেবে।

৪. নামাজের পর ওয়াজ-নসীহত করবে। আল্লাহর কুদরত ও ক্ষমতার কথা মানুষকে স্মরণ করাবে। কুসুফের হিকমত বর্ণনা করবে। ইবাদত-বন্দেগীর প্রতি মানুষদেরকে উৎসাহ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বেঁচে থাকার আহবান জানাবে।

5. বেশি বেশি দুআ, মিনতি, ইস্তিগফার ও দান-খয়রাত ও অন্যান্য ভালো কাজ করবে, যাতে আল্লাহ তাআলা মানুষের ওপর থেকে বালা-মুসিবত উঠিয়ে নেন।

6. কুসুফের ক্ষেত্রে দুআ করার সময় হাত উঠানো বৈধ। আবদুর রহমান ইবনে সামুরা রাযি. বর্ণনা করে বলেন, «অতঃপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এলাম। আর তিনি ছিলেন নামাজে দাঁড়িয়ে দু হাত উত্তোলন করে দুআ রত।»

দিকনির্দেশনা

১. কুসুফ ও খুসুফ অতিক্রান্ত হওয়ার পূর্বে যদি এ ব্যাপারে জানা না যায়, তবে আর নামাজ আদায়ের প্রয়োজন নেই।

২. আধুনিক বিজ্ঞান যদিও কুসুফ ও খুসুফ সংঘটিত হওয়ার কারণ আবিষ্কার করতে পেরেছে। তবে এর অর্থ এটা নয় যে কুসুফ ও খুসুফ আল্লাহর নিদর্শন নয় যা দিয়ে তিনি বান্দাদেরকে ভয় দেখান। অতএব সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণকালে মুসলমানের উচিত ইবাদত-বন্দেগী ও আল্লাহর দরবারে কাকুতি মিনতিতে ব্যস্ত হওয়া। টেলিস্কোপ দিয়ে গ্রহণ প্রক্রিয়া দেখার জন্য মেতে উঠা সমীচীন নয়।

৩. যে ব্যক্তি কুসুফের নামাজের প্রথম রাকাতের প্রথম রুকু ধরতে পারল সে রাকাত পেয়েছে বলে গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি দ্বিতীয় রুকুতে ইমামকে পেল সে রাকাত পায়নি বলে ধরা হবে। এমতাবস্থায় ইমামে সালামের পর প্রথম রাকাত নিয়ম অনুযায়ী কাযা করে নিতে হবে।

৪. নিষিদ্ধ সময়েও কুসুফের নামাজ আদায় করা শুদ্ধ হবে।

৫. অন্য কারও খবরের ওপর ভিত্তি করে কুসুফ ও খুসুফের নামাজে রত হওয়া শরীয়তসিদ্ধ নয়। বরং নিজেদেরকে স্বচক্ষে তা দেখে নিতে হবে।