সদকায়ে ফিতর
তা হলো রমজানান্তে রোজা ভঙ্গকেন্ত্রিক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক আরোপিত সদকা।
যেহেতু রমজনান্তে ফিতর তথা রোজা ভঙ্গ করা হয়, তাই এ সদকাকে সদকায়ে ফিতর বলা হয়।
ঈদের দিন ও রাতে যে ব্যক্তি তার নিজের ও পরিবারের খাবারের অতিরিক্ত এক সা’ পরিমাণ খাদ্যের মালিক হবে তার ওপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হবে।
সদকায়ে ফিতরদাতা নিজের, তার স্ত্রীর ও যাদের ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব রয়েছে, তাদের সবার পক্ষ থেকে সদকায়ে ফিতর আদায় করবে।
সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হওয়ার দলিল ইবনে উমার রাযি. থেকে বর্ণিত হাদীস, তিনি বলেন,‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব করেছেন খেজুরের এক সা’অথবা যবের এক সা’মুসলিম দাস ও স্বাধীন, নারী ও পুরুষ, ছোট ও বড় সবার ওপর। আর তিনি সদকা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন মানুষ নামাজের জন্য বের হওয়ার পূর্বেই।’(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)
সদকায়ে ফিতর আদায়ের ফজিলতপূর্ণ সময় হলো ঈদের দিন সূর্যোদয়ের পর ও ঈদের নামাজের পূর্বে। ঈদের দু একদিন পূর্বেও সদকায়ে ফিতর আদায় করা জায়েয; কেননা সাহাবায়ে কেরাম এরূপ করেছেন। ঈদের নামাজের পর সদকায়ে ফিতর আদায় করা জায়েয নয়। এর প্রমাণ উল্লিখিত হাদীস :‘আর তিনি সদকা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন মানুষ নামাজের জন্য বের হওয়ার পূর্বেই।’
ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে,‘যে ব্যক্তি নামাজের আগে তা আদায় করে দেবে তবে তার সদকা গ্রহণযোগ্য হবে, আর যে নামাজের পর আদায় করবে তার সদকা সাধারণ দান বলে গণ্য হবে।’(বর্ণনায় আবু দাউদ)
প্রত্যেক ব্যক্তির পক্ষ হতে এক সা’ করে সদকায়ে ফিতর আদায় করতে হবে। আর তা হতে হবে মানব-খাদ্য থেকে, যেমন চাউল, খেজুর, গম। আবু সাঈদ খুদরী রাযি. বলেন,‘ঈদের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে খাদ্য থেকে এক সা’ পরিমাণ আদায় করার নির্দেশ দিতেন।’ আবু সাঈদ রাযি. বলেন,‘আর আমাদের খাদ্য ছিল যব, কিশমিশ ও পনীর।’(বর্ণনায় বুখারী)
যাকাতের যে আট খাত উল্লিখিত হয়েছে, সে আট খাতে সদকায়ে ফিতরও বণ্টন করা হবে। সূরা তাওবার ৬০ নং আয়াত
(۞إِنَّمَا ٱلصَّدَقَٰتُ لِلۡفُقَرَآءِ ) [التوبة:06]
এ ক্ষেত্রেও প্রজোয্য।
রোজাদারকে অশ্লীল ও অহেতুক কথা থেকে পবিত্র করা। ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সদকায়ে ফিতর ফরজ করেছেন রোজাদারকে অহেতুক ও অশ্লীল কথা থেকে পবিত্র করার উদ্দেশে ও মিসকীনদের খাবার দান স্বরূপ।’(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)
এটা এ কারণে যে রোজাদার ব্যক্তি অহেতুক ও বাতিল কথাবার্তা থেকে মুক্ত থাকে না। সে হিসেবে এ সদকা রোজাদারকে হারাম ও মাকরুহ কথাবার্তা, যা রোজার ছাওয়াব কমিয়ে দেয় ও রোজার পরিপূর্ণতায় বিঘ্ন ঘটায়, এ সব থেকে রোজাদারকে পবিত্র করে দেয়।
দরিদ্রদের প্রতি প্রশস্তি আনা ও ঈদের দিন তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেয়া যাতে অন্যের কাছে সওয়াল করতে না হয়; কেননা এতে ঈদের দিন তাদেরকে হীন ও অপদস্ত হয়ে থাকতে হয়। পক্ষান্তরে ঈদ হলো আনন্দ ও খুশির দিন। সবাই যাতে এ দিনের আনন্দে অংশ নিতে পারে সে জন্যেই সদকায়ে ফিতরের এ ব্যবস্থা।
আসল হল যে জিনিসে যাকাত ফরজ হয়েছে সরাসরি সে জিনিসকেই যাকাত হিসেবে দেয়া। তবে প্রয়োজন অথবা প্রাধান্যপ্রাপ্ত কোনো স্বার্থের নিরিখে মূল্য নিধারণ করে তা যাকাত হিসেবে দেয়া বৈধ রয়েছে।
যাকাতের সম্পদ উসুল করা মূলত সরকারের দায়িত্ব। তা যাকাতদাতা ও তাদের নিজস্ব অনুমানের ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত নয়। কিন্তু যদি সরকার এ বিষয়ক দায়িত্ব পালনে অবহেলা দেখায়, তাহলে প্রত্যেক মুসলমানের ঘাড়েই তা ব্যক্তিগত দায়িত্ব হিসেবে বর্তাবে।
যাকাতের হকদারদের উপকারে আসবে এমন প্রকল্পসমূহে যাকাতের অর্থ বিনিয়োগ করা বৈধ, যদি এমন কোনো খাত না থাকে, যেখানে তাৎক্ষণিকভাবে যাকাতের অর্থবণ্টন প্রয়োজন হয়ে পড়ে ।
যাকাত হলো নির্দিষ্ট সময় অন্তর-অন্তর খোদ সম্পদে নির্ধারিত হক, যা ক্ষমতাবানদের ওপর ফরজে আইন হিসেবে আরোপিত।
- সম্পদে যাকাত ব্যতীত অন্যান্য অধিকারও রয়েছে, যা সম্পদে মৌলিকভাবে ও সুনির্দিষ্ট অংকে নির্ধারিত নয়। এ অধিকারগুলো খোদ সম্পদের কারণে আরোপিত হয় না, বরং আকস্মিক কোনো কারণে তা প্রতিষ্ঠিত হয়, যার জন্য সম্পদ থাকা শর্ত, যেমন মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন ও স্ত্রীর ভরণপোষণ, আপদ-বিপদ ও সমস্যা দূর করণ। এসব ক্ষেত্রে যদি সরকারি কোষাগার থেকে অর্থব্যয় না করা হয় তবে নিজ অর্থব্যয়েই তা করতে হবে।
- ট্যাক্স, ন্যায়ানুগ হলেও তা যাকাতের স্থলাভিষিক্ত হবে না। কারণ যাকাত হলো একটি ইবাদত। আর ট্যাক্স হলো একটি নাগরিক দায়িত্ব। তাই একটি অন্যটির স্থলাভিষিক্ত হবে না।