আভিধানিক অর্থে সালাত
দুআ
শরয়ী পরিভাষায় সালাত
সুনির্দিষ্ট বাক্যমালা ও কর্মের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করা, যা শুরু হয় তাকবিরের মাধ্যমে ও শেষ হয় সালামের মাধ্যমে।
সালাত ইসলামের দ্বিতীয় রুকন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, «ইসলাম পাঁচটি বিষয়ের ওপর নির্মিত হয়েছে: «এ সাক্ষী দেয়া যে আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। এবং সালাত আদায় করা...।(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)নামাজ সর্বোত্তম আমল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,«সর্বোত্তম আমল হলো ওয়াক্তের শুরুতে নামাজ আদায় করা।»
(বর্ণনায় তিরমিযী)
নামাজ ইসলাম ও কুফরের মাঝে পার্থক্যকারী। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, «ব্যক্তির মাঝে ও কুফর-শিরকের পার্থক্য হলো নামাজ ছেড়ে দেয়া।»(বর্ণনায় মুসলিম)
নামাজ ইসলামের খুঁটি। «তাওহীদের পর নামাজের ওপরই নির্মিত হয় ইসলামি জীবনধারা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, «এ-বিষয়ের মস্তক হলো ইসলাম এবং খুঁটি হলো নামাজ।»(বর্ণনায় আহমদ)
১- নামাজ, নামাজীর জন্য নূরস্বরূপ,«রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,«নামাজ হলো নূর।»(বর্ণনায় মুসলিম)
২- নামাজ গুনাহের কাফ্ফারা। ইরশাদ হয়েছে,
(وَأَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَ طَرَفَيِ ٱلنَّهَارِ وَزُلَفٗا مِّنَ ٱلَّيۡلِۚ إِنَّ ٱلۡحَسَنَٰتِ يُذۡهِبۡنَ ٱلسَّئَِّاتِۚ ذَٰلِكَ ذِكۡرَىٰ لِلذَّٰكِرِينَ ١١٤ )
{আর তুমি নামাজ আদায় করো দিবসের দু»প্রান্তে এবং রাতের প্রথম অংশে। নিশ্চয়ই ভালকাজ মন্দকাজকে মিটিয়ে দেয়। এটি উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য উপদেশ।} [সূরা হুদ:১১৪]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, «তোমাদের কি মনে হয়, যদি কারো দরজার কাছে নদী থাকে যাতে সে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে, তাহলে কি তার শরীরে কোনো ময়লা থাকবে? তারা বলল, «তার গায়ে কোনো ময়লা থাকবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও একই রকম। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা পাপসমূহ মুছে দেন।»
(বর্ণনায় তিরমিযী) (বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)
৩- নামাজ জান্নাতে প্রবেশের কারণ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রবীয়া ইবনে কাআবকে বলেছেন - যিনি জান্নাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথী হওয়ার আগ্রহ ব্যক্ত করেছে- তিনি তাকে বলেছেন,«তাহলে বেশি বেশি সিজদার মাধ্যমে তুমি আমাকে তোমার ব্যাপারে সাহায্য কর।»
(বর্ণনায় তিরমিযী) (বর্ণনায় মুসলিম)
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা অনুযায়ী ফরয।
১-কুরআন : আল্লাহ তাআলা বলেন,
(وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱرۡكَعُواْ مَعَ ٱلرَّٰكِعِينَ)
{আর তোমরা নামাজ আদায় করো, যাকাত দাও ও রুকুকারীদের সাথে রুকু করো} [সূরা আল বাকারা:৪৩]
২-সুন্নাহ : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, «ইসলাম পাঁচটি বিষয়ের উপর নির্মিত: «এ সাক্ষ্য দেয়া যে আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। এবং সালাত আদায় করা, যাকাত প্রদান করা, বায়তুল্লাহর হজ্ব করা এবং রমজানের রোজা রাখা।»(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)
থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ইসলাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। উত্তরে তিনি বললেন,«প্রতিদিন পাঁচ নামাজ। প«্রশ্নকারী বললেন,«এগুলোর বাইরে কি কোনো নামাজ আমার ওপর ফরয রয়েছে?? তিনি বললেন: না, তবে যদি নফল হিসেবে আদায় কর।»
(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)
৩. ইজমা : রাত ও দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরয হওয়ার ব্যাপারে উম্মতে মুহাম্মদী ইজমা তথা ঐকমত্য পোষণ করেছে।
প্রাপ্তবয়ষ্ক ও সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন মুসলিম নারী-পুরুষের ওপর নামাজ ফরয।
বাচ্চাদের নামাজবাচ্চার বয়স সাত বছর হলে নামাজ পড়তে বলা হবে। উদ্দেশ্য হলো নামাজের অভ্যাস গড়ে তোলা। আর যখন দশ বছর বয়সে উপনীত হবে তখন প্রয়োজনে মৃদুভাবে প্রহারও করা হবে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,« তোমাদের বাচ্চাদের বয়স সাত বছর হলে তাদেরকে নামাজের নির্দেশ দাও, আর নামাজের ব্যাপারে তাদেরকে প্রহার করো যখন তারা দশ বছর বয়সে উপনীত হয়|(বর্ণনায় আবু দাউদ)
এ-প্রকৃতির ব্যক্তি অজ্ঞ হলে তাকে শেখানো হবে। এদতসত্ত্বেও যদি সে অস্বীকার করে চলে তবে সে কাফের বলে গণ্য হবে। সে আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুসলমানদের ইজমাকে অস্বীকারকারী বলে সাব্যস্ত হবে।
অলসতাবশত ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ পরিত্যাগকারী ব্যক্তি কাফের। এ-ক্ষেত্রে মুসলিম সরকারের দায়িত্ব হবে এরূপ ব্যক্তিকে নামাজের প্রতি আহবান জানানো এবং তাকে তাওবা করতে বলা। যদি সে তাওবা করে তো ভালো, অন্যথায় তাকে মুরতাদ হিসেবে মৃত্যুদন্ড দেয়ার নির্দেশ রয়েছে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, «আমাদের মাঝে ও তাদের মাঝে যে অঙ্গীকার তা হলো নামাজ। অতঃপর যে ব্যক্তি নামাজ পরিত্যাগ করল সে কাফের
হয়ে গেল।« তিনি আরো বলেছেন, «কোনো ব্যক্তির ও কুফর-শিরকের মাঝে পার্থক্য হলো নামাজ পরিত্যাগ করা।»
(বর্ণনায় মুসলিম)
কাফের ব্যক্তি মুসলমান হলে তার অতীতের নামাজগুলো কাযা করতে হবে না। কেননা ইসলাম গ্রহণের অর্থ পূর্বের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যাওয়া।