বসা অবস্থায় নফল নামাজ পড়া বৈধ, তবে দাঁড়িয়ে পড়ার তুলনায় এর ছাওয়াব হবে অর্ধেক। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,«ব্যক্তি যদি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে তবে এটাই তার জন্য উত্তম। আর যদি বসে নামাজ পড়ে তবে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায়কারীর তুলনায় অর্ধেক ছাওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি শুয়ে নামাজ পড়ে তার ছাওয়াব হয় বসে নামাজ আদায়কারীর অর্ধেক।»(বর্ণনায় বুখারী)
হ্যাঁ যদি ওযরের কারণে বসে নামাজ পড়া হয় তবে পূর্ণ ছাওয়াবই পাওয়া যাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,«যখন কোনো বান্দা অসুস্থ হয়ে পড়ে অথবা সফর অবস্থায় থাকে তাহলে সে মুকীম ও সুস্থাবস্থায় যেরূপ আমল করত সে অনুপাতেই তার ছাওয়াব লেখা হয়।» (বর্ণনায় বুখারী)
যদি কোনো ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে সক্ষম হয়, তবে তার জন্য বসে বসে ফরয নামাজ আদায় করা শুদ্ধ হবে না।
১. নামাজ পড়া অবস্থায় নিয়ত ভেঙ্গে দেয়া জায়েয নয়। যে ব্যক্তি নামাজ কর্তন করার নিয়ত করল তার নামাজ ভেঙ্গে গেল। এমতাবস্থায় আবার প্রথম থেকে নামাজ শুরু করা আবশ্যক হবে। অবশ্য আহলে ইলমদের কারো কারো নিকট এ অবস্থায় নামাজ ভঙ্গ হয় না।
২. যে ব্যক্তি নফল নামাজের নিয়ত করে নামাজ শুরু করল, নামাজের অভ্যন্তরে সে তা ফরজের নিয়তে রূপান্তরিত করতে পারবে না।
৩. যে ব্যক্তি একাকী ফরয নামাজের নিয়ত করে নামাজে দাঁড়াল, এরপর কিছু লোকজন এসে জামাতের সাথে নামাজ শুরু করল, এমতাবস্থায় ফরজের নিয়তকে নফলের নিয়তে রূপান্তরিত করে দু রাকাত শেষ হলে ছালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে পারবে এবং জামাতে শরীক হয়ে ফরয নামাজ আদায় করতে পারবে।
সূরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব। ইমাম ও মুক্তাদী সবার ক্ষেত্রেই সুরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব। জেহরি নামাজের ক্ষেত্রেও এ বিধান প্রযোজ্য। উবাদা ইবনে ছামেত রাযি.বলেন, সূরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব। ইমাম ও মুক্তাদী সবার ক্ষেত্রেই সুরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব। জেহরি নামাজের ক্ষেত্রেও এ বিধান প্রযোজ্য। উবাদা ইবনে ছামেত রাযি.বলেন,«আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পিছনে ফজরের নামাজে ছিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআন পড়লেন। কিন্তু তাঁর কুরআন পড়াটা ভারি মনে হলো। তিনি নামাজ থেকে ফারেগ হয়ে বললেন: তোমরা হয়তো তোমাদের ইমামের পিছনে কুরআন পড়? আমরা বললাম, জ্বি, হে আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেন: সূরা ফাতিহা ব্যতীত তোমরা এরূপ করো না; কেননা যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পড়ল না তার নামাজ হলো না।»(বর্ণনায় আবু দাউদ)
ইমাম, মুক্তাদী, একা নামাজ আদায়কারী সবার জন্য আমীন বলা সুন্নত। ফরয, নফল, প্রকাশ্য কেরাতের নামাজ অপ্রকাশ্য কেরাতের নামাজ তথা সকল নামাজেই সূরা ফাতিহা পাঠান্তে আমীন বলা সুন্নত। নামাজ প্রকাশ্য কিরাআতের হোক বা গোপনীয় কিরাআতের সর্বস্থায় গোপনে আমীন বলবে।
এর দলিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী,«যখন ইমাম আমীন বলে তখন তোমরাও আমীন বলো; কেননা যার আমীন বলা ফেরেশতাদের আমীন বলার সময়ের সাথে মিলে যাবে তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।»
(বর্ণনায় বুখারী)
নামাজ ছুটে গেলে তা কাযা করার সময় জোরে কিরাত পড়বে না আস্তে পড়বে? এ ক্ষেত্রে বলা যায় যে, মূল বিষয় হলো নামাজ, কাযা নামাজ কখন আদায় করছে সেটা মূল দেখার বিষয় নয়। অতএব যদি জেহরি নামাজের কাযা দিনের বেলায় আদায় করে তাহলে প্রকাশ্যে কিরাত পড়া হবে।
নফল নামাজের ক্ষেত্রে মূল হলো গোপনে কিরাত পড়া। তারাবীহ ও খুসুফের নামাজ এথেকে ব্যতিক্রম; যেহেতু এ ব্যাপারে দলিল রয়েছে।
তাকবীরে তাহারিমার সময় হাত উঠানো হবে, আহলে ইলমের কারো কারো নিকট নিম্নবর্তী জায়গাসমূহেও হাত উঠানো হবে:
১- রুকুতে যাওয়ার তাকবীরের সময়।
২- রুকু থেকে উঠার তাকবীরের সময়।
৩- প্রথম তাশাহ্হুদ শেষে দাঁড়ানোর সময়।
মুক্তাদী যদি ইমামকে রুকুতে পায় তবে রাকাত পেয়েছে বলে গণ্য হবে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: «যে ব্যক্তি রুকু পেল, সে রাকাতও পেল।» (বর্ণনায় আবু দাউদ)
নামাজের সকল রুকনে ধীর-স্থিরতা নামাজের রুকনের মধ্যে শামিল, যা পরিত্যাগ করলে নামাজ শুদ্ধ হবে না। হাদীসে এসেছে, আবু হুরায়রা রাযি. বলেন: «রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করলেন। এ সময় এক ব্যক্তি প্রবেশ করে নামাজ পড়ল। নামাজ শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এল ও সালাম করল। তিনি সালামের উত্তর দিলেন এবং বললেন,«তুমি ফিরে গিয়ে আবার নামাজ পড়, কেননা তোমার নামাজ হয়নি।» লোকটি ফিরে গিয়ে পূর্বের মতোই নামাজ পড়ল। এরপর পূনরায় এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সালাম করল। তিন বললেন, «ওয়া আলাইকাস্ সালাম।» এরপর বললেন,«তুমি ফিরে গিয়ে আবার নামাজ পড়ো, কেননা তোমার নামাজ হয়নি।»
এরূপ তিনি তিনবার করলেন। অতঃপর লোকটি বলল, যিনি আপনাকে সত্য দিয়ে পাঠিয়েছেন, তাঁকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি এর চেয়ে উত্তমভাবে পারি না। আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন,«তুমি যখন নামাজে দাঁড়াবে,তাকবীর দেবে। এরপর আল কুরআনের যেটুকু তোমার পক্ষে সহজ তা পড়বে। এরপর রুকুতে যাবে এবং স্থির হয়ে রুকু সম্পন্ন করবে। এরপর রুকু থেকে উঠবে এবং সোজা হয়ে দাঁড়াবে। এরপর সিজদায় যাবে এবং স্থির হয়ে সিজদা সম্পন্ন করবে। এরপর সিজদা থেকে উঠবে এবং স্থির হয়ে বসবে। তুমি নামাজের সকল অংশেই এরূপ করবে।»(বর্ণনায় বুখারী)
সিজদা সাতটি অঙ্গের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,«যখন বান্দা সিজদা করে তার সাথে সাতটি অংশও সিজদা করে: তার চেহারা। দুই হাত। দুই হাঁটু। দুই পা।»(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)
সুন্নত হলো আঙ্গুল দিয়ে তাশাহ্হুদের সময় ইশারা করা। ওয়াইল ইবনে হুজর রাযি. থেকে বর্ণিত হাদীস এর দলিল। হাদীসটি হলো, «অতঃপর তিনি তার তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করলেন। আমি তাকে তা নাড়াতে এবং তা দিয়ে দুআ করতে দেখলাম।»(বর্ণনায় নাসায়ী)
নামাজের ভিতরে কুরান তিলাওয়াত, তাকবীর, দুআ ইত্যাদি মনে মনে পড়লে হবে না। বরং তা জিহ্বা দিয়ে উচ্চারণ করতে হবে। নূন্যতম পক্ষে এগুলো পড়ার সময় জিহ্বা ও ঠোঁট নাড়াতে হবে।