নামাজের আদব

9200

 

নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বড় একটি ইবাদত। নামাজে একজন মুসলমান তার শরীর ও মন আল্লাহমুখী করে ঐকান্তিকভাবে দাঁড়ায়। তাই নামাজের পূর্বে শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি প্রয়োজন, যাতে নামাজের জন্য সম্পূর্ণভাবে ফারেগ হয়ে একাগ্রচিত্তে বিশুদ্ধভাবে তা আদায় করা সম্ভব হয়। তাই একজন নামাজীর নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলোর প্রতি নজর রাখা আবশ্যক:

১- ইখলাস

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:

(وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ وَيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ وَذَٰلِكَ دِينُ ٱلۡقَيِّمَةِ ٥)

যেকোনো আমলে ইখলাস থাকা অত্যন্ত জরুরি; কেননা যে আমলে ইখলাস নেই, যে আমলে রিয়া অথবা সুনাম কুড়ানোর ভাব মিশ্রিত, সে আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। যে আমলে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা হয়, সে আমলও আল্লাহর কাছে প্রত্যাখ্যাত।

২- উত্তমরূপে অজু করা

অর্থাৎ সুনিপুণভাবে ও পূর্ণাঙ্গরূপে অজু করা।

আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, «আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয়ের দিকনির্দেশনা দিব না যার দ্বারা আল্লাহ তাআলা গুনাহ মাফ করবেন এবং দরজা বুলন্দ করবেন? তারা বললেন,« অবশ্যই দেবেন হে আল্লাহর রাসূল!। তিনি বললেন, কষ্ট সত্ত্বেও উত্তমরূপে অজু করা, মসজিদ পানে বেশি বেশি পদচারণা এবং এক নামাজের পর অন্য নামাজের অপেক্ষায় থাকা। এটাই হলো রিবাত, আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখা।»
(বর্ণনায় মুসলিম)

আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখা।»

৩- সকাল-সকাল নামাজে যাওয়া

অর্থাৎ নামাজের অপেক্ষায় থাকার ফজিলত ধরার উদ্দেশে সকাল-সকাল নামাজের জন্যে বের হয়ে যাওয়া। আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, «তোমাদের কেউ যতক্ষণ পর্যন্ত নামাজের অপেক্ষায় থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত সে নামাজেই থাকে।» (বর্ণনায় বুখারী)

৪ - যিকর ও দুআ

ঘর থেকে বের হওয়ার সময় দুয়া পড়া ও বলা:

باسم الله، توكلت على الله، ولا حول ولا قوة إِلا باللهِ، اللهم إِني أعوذ بك أن أَضِل أو أُضل، أو أزِل أو أُزَل، أو أظلِم أو أُظْلَم، أو أجهَل أو يُجهْل عليَّ

«বিসমিল্লাহ, আমি আল্লাহর ওপর ভরসা করেছি, সকল কৌশল ও শক্তি কেবল আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি দিকভ্রান্ত হওয়া অথবা অন্য কর্তৃক পথভ্রষ্ট হওয়া থেকে। পদস্খলন ঘটা অথবা পদস্খলিত হওয়া থেকে। কারও ওপর জুলুম করা অথবা কারো দ্বারা নির্যাতিত হওয়া থেকে। কারও সাথে মূর্খতাপূর্ণ আচরণ অথবা অন্যের মূর্খতাজনিত আচরণে আক্রান্ত হওয়া থেকে।»
(বর্ণনায় আবু দাউদ)

মসজিদে যাওয়ার পথে আল্লাহ তাআলার যিকর করা ও বলা:

اللهم اجعل في قلبي نوراً، وفي لساني نوراً، واجعل في سمعي نوراً، واجعل في بصري نوراً، واجعل من خلفي نوراً، ومن أمامي نوراً، واجعل من فوقي نوراً، ومن تحتي نوراً، اللهم أعطني نوراً

«হে আল্লাহ, আপনি আমার অন্তরে নূর রাখুন। আমার জিহ্বায় নূর রাখুন। আমার কানে নূর রাখুন। আমার চোখে নূর রাখুন। আমার পিছনে নূর রাখুন। আমার সামনে নূর রাখুন। আমার ওপরে নূর রাখুন। আমার নিচে নূর রাখুন। হে আল্লাহ আপনি আমাকে নূর দিন।»(বর্ণনায় মুসলিম)

৫- ধীরস্থিরতা ও ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে নামাজে গমন করা।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, «যখন তোমরা ইকামত শুনবে তখন নামাজের দিকে হেঁটে যাও। আর তোমরা ধীরস্থিরতা ও গাম্ভীর্যতা অবলম্বন করে চলো, দৌড়ে চলো না। অতঃপর নামাজের যেটুকু পাও আদায় করো, আর যেটুকু ছুটে যায় তা নিজেরা পূর্ণ করে নাও।»(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)

৬- মসজিদে প্রবেশ করা ও বের হওয়ার সময় দুআ পড়া

মসজিদে প্রবেশের সময় বলবে:

أعوذ بالله العظيم، وبوجهه الكريم، وسلطانه القديم من الشيطان الرجيم ، بسم الله، والصلاة والسلام على رسول الله، اللهم افتح لي أبواب رحمتك

«আমি মহান আল্লাহ তাআলার, তাঁর সম্মানিত চেহারার, তাঁর অনাদিকাল থেকে চলে আসা আধিপত্যের আশ্রয় চাচ্ছি অভিশপ্ত শয়তান থেকে।»

«আল্লাহর নামে শুরু করছি, আর সালাত ও সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর।

«হে আল্লাহ আপনি আমার জন্য রহমতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দিন।»(বর্ণনায় আবু দাউদ)

আর মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় বলবে:

بسم الله، والصلاة والسلام على رسول الله، اللهم إني أسألك من فضلك، اللهم اعصمني من الشيطان الرجيم

«আল্লাহর নামে শুরু করছি, আর সালাত ও সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর। হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে আপনার অনুগ্রহ কামনা করছি। হে আল্লাহ, আপনি আমাকে অভিশপ্ত শয়তান থেকে বাঁচান।»

৭- দু রাকাত নামাজ পড়ার পূর্বে না বসা

হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,«যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন বসার পূর্বে দূ রাকাত নামাজ পড়ে নেয়।»
(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)

৮- হাতের আঙ্গুল পরস্পর বিজড়িত করা থেকে বিরত থাকা

«হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, «যখন তোমাদের কেউ অজু করবে এবং তার অজু সুন্দরভাবে সম্পন্ন করবে, অতঃপর মসজিদে গমনের নিয়তে বের হবে, সে যেন তার আঙ্গুল পরস্পরে বিজড়িত না করে; কেননা সে নামাজেই রয়েছে।(বর্ণনায় আবু দাউদ)

৯- যিকর ও দুআয় মশগুল থাকা

নামাজের জন্য অপেক্ষার সময় যিকর-দুআ, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদিতে মশগুল থাকা। অন্য মুসল্লীদেরকে বিরক্ত না করা।

১০- নামাজে খুশুখুজু

খুশুখুজু হলো নামাজের মজ্জা। নামাজের রুহ। আর খুশুখুজুবিহীন নামাজ হলো আত্মাহীন মৃতব্যক্তির ন্যায়। ইবনে রজব রহ. বলেছেন: খুশু হলো: হৃদয়ের কোমলতা, বিগলিত অবস্থা, ধীরস্থিরতা, আনুগত্য, ভঙ্গুর অবস্থা ও জ্বলন। অতঃপর যখন অন্তর খুশুপূর্ণ হবে তখন শরীরের সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ খুশুপূর্ণ হবে; কেননা তা অন্তরের অনুগামী।(ইবনে রাজব, আল খুশু) অতএব খুশুর স্থল হলো অন্তর। আর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হলো অন্তরের মুখপাত্র।

১১- নামাজের সকল অংশে সুন্নতে রাসূলের অনুসরণ

কেননা নামাজ হলো ইবাদত। আর ইবাদতে সুন্নতে রাসূলের অনুসরণ অত্যাবশ্যকীয়। অতএব নামাজে এমনকিছু বলা বা করা যাবে না, যা সুন্নত বহির্ভূত। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,«তোমরা নামাজ পড়ো যেভাবে আমাকে নামাজ পড়তে দেখেছ।»(বর্ণনায় বুখারী)