রোজার রুকন, মুস্তাহাব, মাকরুহ ও রোজাভঙ্গকারী বিষয়সমূহ

7013

 

রোজার রুকনসমূহ

প্রথম রুকন: সুবেহ সাদেক উদয় হওয়ার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজাভঙ্গকারী বিষয় থেকে বিরত থাকা।

ইরশাদ হয়েছে:

(وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ ٱلۡخَيۡطُ ٱلۡأَبۡيَضُ مِنَ ٱلۡخَيۡطِ ٱلۡأَسۡوَدِ مِنَ ٱلۡفَجۡرِۖ ثُمَّ أَتِمُّواْ ٱلصِّيَامَ إِلَى ٱلَّيۡلِۚ)

{এবং তোমরা আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কাল রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। অতঃপর রাত পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর।} [সূরা আল বাকারা:১৮৭]

সাদা ও কালো রেখার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: দিনের শুভ্রতা ও রাতের কৃষ্ণতা।

দ্বিতীয় রুকন : নিয়ত

অর্থাৎ রোজাদার ব্যক্তি রোজাভঙ্গকারী-বিষয়সমূহ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করার নিয়ত করবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয় আমল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল, আর প্রত্যেকের জন্য তাই নির্ধারিত যা সে নিয়ত করেছে।’(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)

যে ব্যক্তি ভুল করে রোজা ভঙ্গ করল

সূর্যাস্ত সম্পন্ন হয়েছে অথবা সুবেহ সাদেক উদয় হয়নি বলে ধারণা করে যে ব্যক্তি খাদ্য-পানীয় গ্রহণ করল, কিন্তু পরবর্তীতে প্রকাশ পেল যে তার ধারণা ভুল ছিল, এমতাবস্থায় ওই রোজা কাজা করা আবশ্যক হবে না। এর প্রমাণ আল্লাহ তাআলার বাণী:

(وَلَيۡسَ عَلَيۡكُمۡ جُنَاحٞ فِيمَآ أَخۡطَأۡتُم بِهِۦ وَلَٰكِن مَّا تَعَمَّدَتۡ قُلُوبُكُمۡۚ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمًا ٥ )

{আর এ বিষয়ে তোমরা কোন ভুল করলে তোমাদের কোনো পাপ নেই; কিন্তু তোমাদের অন্তরে সংকল্প থাকলে (পাপ হবে)। আর আল্লাহ অধিক ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।} [সূরা আল আহযাব:৫]

হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘নিশ্চয় আল্লাহ আমার উম্মাতের ওপর ভুল ও ভুলে যাওয়া ও বাধ্য হয়ে-কৃত বিষয়গুলো ক্ষমা করে দিয়েছেন।’ (বর্ণনায় ইবনে মাজাহ)

রোজায় যা বৈধ

১ - গোসল করা, ঠান্ডা পানিতে বসা

২ – মুখের থুতু ও কাশ গিলে ফেলা

৩ - জিহা দিয়ে কোনো খাদ্যের কেবল াদ পরীক্ষা করে দেখা। তবে শর্ত হলো কোনোকিছুই যেন কন্ঠের নিচে প্রবেশ না করে।

৪- আতর-সুগন্ধি ইত্যাদির ঘ্রাণ নেয়া

রোজাদারের মেসওয়াক ব্যবহার

যেকোনো সময় মেসওয়াক ব্যবহার করা বৈধ, হোক তা সূর্যে ঢলে যাওয়ার পূর্বে অথবা পরে। হোক তা তাজা অথবা শুষ্ক। তবে মেসওয়াক তাজা হওয়ার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে তা যেন কন্ঠের নিচে চলে না যায়; কেননা এরূপ হলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।

রোজার সুন্নত-মুস্তাহাবসমূহ

১ - সেহরি খাওয়া এবং তা দেরি করে ফজরের আযানের কিছু সময় পূর্বে খাওয়া।

হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘তোমরা সেহরি খাও; কেননা সেহরিতে বরকত রয়েছে।’ (বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)

অল্প ও বেশি উভয় পরিমাণ খাবার দিয়েই সেহরি সম্পন্ন হয়। এমনকি এক ঢোক পানি দিয়েও সেহরি সপন্ন হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সেহরি হলো বরকতময়। তাই তোমরা সেহরি খাওয়া ছেড়ো না। এমনকি যদি এক ঢোক পানি দিয়ে হয় তবু; কারণ আল্লাহ তাআলা সেহরি গ্রহণকারীদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন ও ফেরেশতারা তাদের জন্য দুআ করেন।’(বর্ণনায় আহমদ)

সেহরি দেরি করে করা মুস্তাহাব; যায়েদ ইবনে ছাবেত রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,‘আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সেহরি করলাম অতঃপর ফজরের নামাজের উদ্দেশ্যে দাঁড়ালাম। আনাস ইবনে মালেক রাযি. বলেন: আমি বললাম: সেহরি ও ফজরের নামাজের মধ্যে কতটুকু সময় ছিল? তিনি বললেন: পঞ্চাশ আয়াত পড়ার পরিমাণ সময়।’(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)

আযানের মুহূর্তে পান করা

যদি আযান শুরু হয়ে যায় আর কোনো ব্যক্তি পানি পানরত থাকে, তবে সে অবশিষ্ট পানি পান করে শেষ করতে পারে। আবু হুরায়রা রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ আযান শুনে আর পাত্র তার হাতে থাকে, তবে সে যেন তার প্রয়োজন শেষ হওয়ার আগে তা রেখে না দেয়।’

২ - দ্রুত ইফতার করা

রোজাদারের জন্য মুস্তাহাব হলো দ্রুত ইফতার করা। অর্থাৎ সূর্যাস্ত যাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হলে সাথে সাথে ইফতার করা। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘মানুষ ভালো থাকবে যতক্ষণ তারা দ্রুত ইফতার করে যাবে।’ (বর্ণনায় আবু দাউদ)

তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করা মুস্তাহাব। তাজা খেজুর না পাওয়া গেলে শুকনো খেজুর দিয়ে ইফতার করা। খেজুর বেজোড় সংখ্যায় হওয়া। যদি খেজুর না পাওয়া যায় তবে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে ইফতার করা। আনাস ইবনে মালিক রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে,‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজের পূর্বে বেজোড় সংখ্যক তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তাজা খেজুর না পেলে শুকনো খেজুর দিয়ে। আর খেজুর না পেলে তিনি কয়েক ঢোক পানি পান করে ইফতার করতেন।’(বর্ণনায় তিরমিযী)

৩- ইফতারের সময় দুআ

হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইফতার করতেন, বলতেন,

«ذَهَبَ الظَّمَأُ، وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ، وَثَبَتَ الأَجْرُ إِنْ شَاءَ الله»

‘তৃষ্ণা চলে গেছে, শিরাগুলো আদ্র হয়েছে আর ছাওয়াব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনত্র্য বলেছেন, ‘নিশ্চয় ইফতারের সময় রোজাদারের দুআ ফিরিয়ে দেয়া হয় না।’ (বর্ণনায় ইবনে মাজাহ)

৪- অহেতুক ও অশ্লীল কথা পরিত্যাগ করা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন রোজা রাখবে তখন সে যেন অশ্লীল কথা বর্জন করে, ঝগড়া ও হট্টগোল বর্জন করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হয় তখন সে যেন বলে, আমি রোজাদার।’(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)

৫- বেশি বেশি ইবাদত করা

যেমন কুরআন তিলাওয়াত, আল্লাহর যিকর করা, তারাবির নামাজ পড়া, তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া, লাইলাতুল কদর যাপন করা, ফরজ নামাজের আগে-পড়ের সুন্নতগুলো আদায় করা, দান-সদকা করা, ভালো কাজ সম্পাদনে অর্থ ও শ্রম ব্যয় করা, রোজাদারদেরকে ইফতার করানো ও মাহে রমজানে উমরা আদায় করা; কেননা মাহে রমজানে নেক আমলের ছাওয়াব বাড়িয়ে দেয়া হয়। ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব থেকে বেশি দানশীল ছিলেন, আর তিনি মাহে রমজানে সমধিক দানশীল হতেন, যখন জিব্রীল তার সাথে সাক্ষাৎ করতেন। আর জিব্রীল রমজানের প্রতি রাতেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং তাঁকে কুরআন চর্চা করাতেন। যখন জিব্রীল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি দান-খয়রাতে উন্মুক্ত বাতাস থেকেও অধিক বেগবান হতেন।’(বর্ণনায় বুখারী)

রোজা রাখা অবস্থায় যা মাকরুহ

১ - কুলি করা ও নাকে পানি দেয়ায় অতিরঞ্জন করা

কেননা এরূপ করলে পেটে পানি চলে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এতদসংক্রান্ত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আর নাকে পানি দেয়ায় তুমি অতিরঞ্জন করো, তবে যদি রোজাদার হও।’
(বর্ণনায় আবু দাউদ)

২ - যৌনোত্তেজনাসহ চুম্বন করা

রোজাদার ব্যক্তি যদি বীর্যপাত অথবা উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করে তবে তার পক্ষে চুম্বন করা মাকরুহ হবে। আর রোজাদার ব্যক্তির উচিত হবে এমনসব বিষয় বর্জন করা যার দ্বারা যৌনাত্তেজনা আন্দোলিত হয়। হাঁ, যদি রোজা ভঙ্গ হবে না বলে আত্মবিশ্বাস থাকে, তবে তার কথা ভিন্ন। আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,,‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোজা রাখা অবস্থায় চুম্বন করতেন, আলিঙ্গন করতেন। আর তিনি ছিলেন তোমাদের মধ্যে সবথেকে বেশি তার প্রয়োজনকে নিয়ন্ত্রণকারী।’(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম) এ কারণেই যুবকদের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর একে অন্যের সাথে জড়িয়ে থাকা মাকরুহ। অবশ্য বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে মাকরুহ নয়। আবু হুরায়রা রাযি. হতে বর্ণিত, ‘এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বামী-স্ত্রীর একে অন্যের সাথে জড়িয়ে থাকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। অন্যএক ব্যক্তি এসে অভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করল, তবে তিনি তাকে নিষেধ করলেন। দেখা গেল, তিনি যাকে অনুমতি দিলেন সে ছিল বৃদ্ধ। আর যাকে অনুমতি দিলেন না সে ছিল যুবক।’ [বর্ণনায় আবু দাউদ]

রোজাভঙ্গকারী বিষয়সমূহ

১ - রোজা রাখাবস্থায় ইচ্ছা করে খাবার ও পানীয় গ্রহণ

আল্লাহ তাআলা বলেন :

(وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ ٱلۡخَيۡطُ ٱلۡأَبۡيَضُ مِنَ ٱلۡخَيۡطِ ٱلۡأَسۡوَدِ مِنَ ٱلۡفَجۡرِۖ ثُمَّ أَتِمُّواْ ٱلصِّيَامَ إِلَى ٱلَّيۡلِۚ)

{এবং তোমরা আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কাল রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। অতঃপর রাত পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর।} [সূরা আল বাকারা:১৮৭]

কাজের কারণে রোজা ভঙ্গ করা

যে ব্যক্তি চুল্লিতে অথবা অন্যকোনো কঠিন কাজে নিয়োজিত তার জন্য রোজা ভাঙ্গা বৈধ হবে না; কেননা সে অন্যদের মতোই রোজা রাখার নির্দেশের আওতাভুক্ত।

দ্রষ্টব্য

যে ব্যক্তি রোজা রাখার কথা ভুলে গিয়ে খেল বা পান করল তার রোজা শুদ্ধ হবে। তবে মনে হওয়ার সাথে সাথে খাবার ও পানীয় বর্জন করতে হবে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রোজার কথা ভুলে গেল, অতঃপর খেল ও পান করল, সে যেন তার রোজা পূর্ণ করে; কেননা আল্লাহ তাআলাই তাকে খাইয়েছেন ও পান করিয়েছেন।’(বর্ণনায় মুসলিম)

যা কিছু খাবার ও পানীয় বলে গণ্য তা যদি মুখ অথবা নাকের পথ হয়ে পেটে প্রবেশ করে তবে রোজা ভেঙ্গে যাবে, যেমন খাদ্যজাতীয় ইনজেক্শন। তবে যে ইনজেকশন খাদ্যজাতীয় নয়, যেমন ইনসোলিন ইত্যাদি রোজাভঙ্গকারী বলে বিবেচিত নয়; কেননা তা খাদ্য ও পানীয়ের মধ্যে পড়ে না।

প্রয়োজনের তাগিদে মুখ দিয়ে মেডিকেল স্প্যাকুলাম প্রবেশ করালে অথবা ইনহেইলার ব্যবহার করলে রোজা ভঙ্গ হবে না। তদ্রূপভাবে সুরমা অথবা চোখ ও কানে ওষুধের ড্রপ ব্যবহার করলে রোজা ভঙ্গ হবে না; কেননা এর দ্বারা রোজা ভঙ্গ হওয়ার কোনো দলিল পাওয়া যায় না। উপরন্তু চোখ, খাদ্য ও পানীয় গ্রহণের স্বাভাবিক পথ নয়। কান ও নাকের ড্রপের ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য। তবে নাকের ড্রপের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উত্তম; কেননা রোজাদারের ক্ষেত্রে নাকে পানি দেয়ায়

অতিরঞ্জন থেকে বারণ করা হয়েছে। উপরন্তু নাক পাকস্থলির প্রবেশপথ বলেও গণ্য।

আর যদি রোজাদার ব্যক্তি এমন কোনো জিনিস গ্রহণ করে যা খাদ্য নয়, অথবা যা ক্ষতিকর, যেমন বিড়ি-সিগারেট, তবে তা রোজাভঙ্গকারী বলে বিবেচিত হবে। কেননা সে তা খাদ্যগ্রহণের স্বাভাবিক পথ দিয়ে গ্রহণ করেছে। আর তা হলো মুখ। উপরন্তু এটা খাদ্য ও পানীয়ের মতোই।

যা থেকে বেঁচে থাকা অসম্ভব, যেমন রাস্তার ধুলোবালি, দাঁতের ফাঁকে লেগে-থাকা খাদ্য ইত্যাদির দ্বারা রোজা ভঙ্গ হবে না।

২ - রতিক্রিয়া

আল্লাহ তাআলা বলেন:

(أُحِلَّ لَكُمۡ لَيۡلَةَ ٱلصِّيَامِ ٱلرَّفَثُ إِلَىٰ نِسَآئِكُمۡۚ )

{সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে।}
[আল বাকারা: ১৮৭]

অতএব রমজান মাসে দিনের বেলায় রতিক্রিয়ায় লিপ্ত হলে রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা ও কঠিন কাফফারা উভয়টাই আবশ্যক হবে। আর এ ক্ষেত্রে কাফফারা হলো গোলাম আযাদ করা। গোলাম আযাদ করতে অপারগ হলে দু মাস লাগাতার রোজা রাখা। রোজা রাখতে অপারগ হলে ষাটজন মিসকীনকে খাবার খাওয়ানো। আবু হুরায়রা রাযি. বর্ণনা করেন, ‘এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলল, ‘আমি ধ্বংস হয়ে গেছি।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘কেন, কি হয়েছে?’ লোকটি বলল, ‘রোজা অবস্থায় স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছি।’ তিনি বললেন, ‘তুমি কি একটি গোলাম আযাদের সামার্থ্য রাখো?’ লোকটি বলল, ‘না’, তিনি বললেন, ‘তুমি কি দু’মাস লাগাতার রোজা রাখতে পারবে? লোকটি বলল, ‘না’, তিনি বললেন, ‘তুমি কি ষাটজন মিসকীনকে খাওয়াতে পারবে?’ লোকটি বলল, ‘না’, তিনি বললেন, ‘বসো’। লোকটি বসল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বড় একটি মাপ-পাত্র নিয়ে এলেন যাতে খেজুর ছিল। তিনি বললেন, ‘নাও, এগুলো সদকা করে দাও।’ লোকটি বলল, ‘আমাদের চেয়েও দরিদ্রকে দান করব?!’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাসলেন, এমনকি তাঁর দান্দান মুবারক উন্মোচিত হয়ে গেল। অতঃপর তিনি বললেন, ‘এগুলো তোমার পরিবারকে খাওয়াও।’(বর্ণনায় তিরমিযী)

রোজার কাফফারা হবে উপরে বর্ণিত অনুক্রম অনুযায়ী। অর্থাৎ যদি রোজা রাখতে অপারগ হয় তবেই কেবল মিসকীনকে খাদ্যদানের সুযোগ গ্রহণ করা যাবে। আর যদি গোলাম আযাদের সক্ষমতা থাকে তবে রোজা রাখার সুযোগ নেয়া বৈধ হবে না।

আর নারী যদি রতিক্রিয়ায় পুরুষের সাথে সায় দেয় তাহলে নারীকেও কাফফারা দিতে হবে। কিন্তু যদি নারীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও পুরুষ তাকে বাধ্য করে, তবে নারীর রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং তা কাযা করতে হবে তবে কাফ্ফারা দিতে হবে না|